শিরোনাম

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

ঠিক এক বছর আগের এই দিনে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নজিরবিহীন সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ের বিনিময়ে শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটেছিল। চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে রূপ নেওয়া এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন তরুণেরা। তাঁদেরই একটি বড় অংশ মিলে গঠন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

অভ্যুত্থানের দলিল হিসেবে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের জন্য গত এক বছরে সবচেয়ে সোচ্চার ছিল এনসিপি। সেই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান ছিল আজ মঙ্গলবার। শুধু তাই নয়, জুলাই শহীদদের সংবর্ধনাসহ গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠানও চলছিল। এমন দিনে এনসিপির পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে হঠাৎ কক্সবাজারে দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কেন কক্সবাজারে গেলেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা–সমালোচনা।

তাঁদের কক্সবাজারে যাওয়া নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তাঁদের ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। জোরালো গুঞ্জন উঠেছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতেই তাঁরা সেখানে গেছেন। এখন টিভিসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এই গুঞ্জনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে বৈঠকের খবরকে ‘অপপ্রচার’ ও ‘গুজব’ বলে দাবি করেছেন এনসিপির নেতারা।

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির কয়েকজন নেতাকে কক্সবাজারে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির কয়েকজন নেতাকে কক্সবাজারে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

সূত্রমতে, এই সফরে ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও তাঁর স্বামী এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। তাঁদের আরও কারও সঙ্গে পরিবারের সদস্য থাকতে পারেন।

পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এনসিপির কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এনসিপি নেতাদের যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাঁরা সবাই বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে দলটির নেতারা কক্সবাজারে কেন গেলেন, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে নানা আলোচনা।

এনসিপির নেতাদের কক্সবাজারে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির নেতাদের কক্সবাজারে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

পিটার হাসের সঙ্গে তাঁদের কোনো মিটিং হয়নি দাবি করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এখন টিভিকে বলেছেন, ‘পুরোটাই গুজব ও প্রোপাগান্ডা। আমরা ঘুরতে এসেছি। হোটেলে চেক-ইন করে এমন নিউজ দেখলাম।’ খালেদ সাইফুল্লাহও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এটাকে ‘সম্পূর্ণ ভুয়া খবর’ বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন এখানে ঘুরতে এসেছি।’

এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজারে সংশ্লিষ্ট হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা। সি পার্ল হোটেল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আজ হঠাৎই এনসিপি নেতারা কক্সবাজারে উপস্থিত হন। আগে থেকে তাঁদের রিজার্ভেশন ছিল না। তাঁরা পরে পাঁচতলার দুটি রুম বুক করেন।

এই প্রেক্ষাপটে বোঝা যায়, তাঁদের এই সফর হঠাৎ এবং জরুরি হতে পারে। আবার রিজার্ভেশন না করার সিদ্ধান্তও পরিকল্পিত হতে পারে।

একাধিক সূত্র বলছে, কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপির ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গোপন বৈঠক’ হয়েছে। বৈঠকে নাসীরুদ্দীন, হাসনাত, সারজিস, জারা ও খালেদ ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আজ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করার জন্য প্রভাবিত করতে তাঁরা পিটার হাসকে অনুরোধ করেছেন বলে সূত্রের দাবি।

সূত্রমতে, গোপন বৈঠকটি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে, ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ ঘিরে গুরুত্ব বহন করছে। এনসিপি নেতাদের এই সফরের ব্যাপারে জেলা পুলিশকে আগে অবহিত করা হয়নি। পুলিশের এক শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তার স্ত্রী নিজের মোবাইল ফোনে কক্সবাজার এসবিকে ফোন করে প্রটোকলের ব্যবস্থা করেন।

২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপরই গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার ছিল ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও প্রকাশ। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ বিকেল ৫টার দিকে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button