শিরোনাম

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি সরবরাহ

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি সরবরাহ

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহ শুরু হওয়ার ফলে দেশের জ্বালানি খাতে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। কয়েকটি ট্রায়াল অপারেশনের সফল বাস্তবায়নের পর এ পর্যন্ত পাইপলাইনে সাড়ে চার কোটি লিটার জ্বালানি তেল ঢাকায় পৌঁছেছে, আর ঘণ্টায় ২৮০ টন ডিজেল সরাসরি স্থানান্তরিত হচ্ছে।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও তদারকি

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিশ্চিত করেছে, সব ব্যবস্থাপত্র ঠিকঠাক হওয়ার পর ১৪ আগস্ট ভোরে পাইপলাইন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। চট্টগ্রামে গুপ্তাখাল অঞ্চলের পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রমের শুরুর সংকেত দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের (সিডিপিএল) পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল হক আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও প্রযুক্তিগত দিক

উদ্বোধনের পর তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল—এই পাইপলাইন ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল সরবরাহ শুরু করবে। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়া হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লায় ডিজেল পরিবহনের জন্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

পাইপলাইন ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডেসপাচ টার্মিনালের স্ক্যাডা মাস্টার কন্ট্রোল স্টেশন মূল নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এতে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল সংযুক্ত করা হয়েছে, যা টেলিকমিউনিকেশন, স্ক্যাডা নিয়ন্ত্রণ ও লিক ডিটেকশনে সহায়তা করবে। সম্পূর্ণ যোগাযোগ ও তেলের পরিমাণ, তাপমাত্রা ও সরবরাহের হিসাব কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে, ফলে ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।

ট্রায়াল অপারেশন ও সক্ষমতা

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ জুন বিকেলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে ট্রায়াল অপারেশনের মাধ্যমে ডিজেল পরিবহন শুরু হয়। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শুরু হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি নব তরঙ্গ হিসেবে তেল গোদনাইলে পৌঁছানোর মতো প্রাথমিক ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে সাফল্যের ছাপ রয়েছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ঘণ্টায় ২৮০ টন ডিজেল পাঠানো হলেও পাইপলাইনের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ঘণ্টায় ৩২০ টন পর্যন্ত উন্নীত করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবেই চলছে এবং কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।

প্রকল্পের অবকাঠামো ও আর্থিক দিক

এই পাইপলাইন প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। প্রকল্পটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মোট আড়াই শ কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের অংশে ২৪১.২৮ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ব্যবহার হয়েছে এবং গোদনাইল থেকে ঢাকার অংশে ৮.২৯ কিলোমিটার ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ স্থাপন করা হয়েছে।

একটি সর্বাধুনিক অটোমেটেড ডিপো কুমিল্লার বরুড়ায় তৈরি করা হয়েছে, যার ধারণক্ষমতা ২১ হাজার টন। এখানে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশের এলাকাগুলোয় ডিজেল সরবরাহের কাজ করা হবে, যা আগে নৌপথে পাঠানো হতো।

বছরে ২৭ থেকে ৩০ লাখ টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে, আর ভবিষ্যতে এই ক্ষমতা ৫০ লাখ টনে উন্নীত করা যাবে। নিয়ন্ত্রিত ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ফলে নৌ, সড়ক ও রেলপথে পরিবহনের সময় ও খরচ কমবে, পাশাপাশি অপচয় ও তেলের চুরির আশঙ্কাও দূর হবে।

তদারকি ও বাস্তবায়নে অংশীদারি

পাইপলাইনের তদারকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে। বিপিসির নবগঠিত প্রতিষ্ঠান, পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপিএলসি) এবং সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ইউনিটও এই প্রকল্পের তদারকিতে যুক্ত আছে।

এই উদ্যোগ দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করবে, পাইপলাইনে কোনো ভাঙা বা অপচয় হওয়ার আশঙ্কা থাকছে না।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button