শিরোনাম

আমার মা সিলেটী, দিল্লিতে থাকেন—ভারতে বাংলা ভাষা নিয়ে বিতর্কে মহুয়া মৈত্রর হুংকার

আমার মা সিলেটী, দিল্লিতে থাকেন—ভারতে বাংলা ভাষা নিয়ে বিতর্কে মহুয়া মৈত্রর হুংকার

দিল্লি পুলিশের একটি সরকারি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে চিহ্নিত করার ঘটনায় প্রবল উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারতের বাংলাভাষীদের মধ্যে। লোধি কলোনি থানার পক্ষ থেকে দিল্লির বঙ্গভবনে পাঠানো ওই চিঠিতে একটি নথির বিষয়ে বলা হয়—এটি ‘বাংলাদেশি ভাষায়’ লেখা এবং এটিকে হিন্দি ও ইংরেজিতে অনুবাদ করা প্রয়োজন।

এই বক্তব্যে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলতে আসলে বাংলা ভাষাকেই বোঝানো হয়েছে। তবে এর পেছনে ভাষাগত অসতর্কতা নাকি রাজনৈতিক মনোভাব কাজ করেছে—তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।

এই বিতর্কের মধ্যেই আজ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এক্স মাধ্যমে লিখেছেন, “হ্যালো দিল্লি পুলিশ (@DelhiPolice) আমার মা সিলেটী এবং সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। তিনি দিল্লিতে থাকেন এবং আপনাদের সমস্ত ‘বাংলাদেশি ভাষার’ নথি অনুবাদ করতে সাহায্য করতে পারেন। আপনাদের অফিসারদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মৌলিক পাঠও দিতে পারেন। ”

এর আগে গত রোববার (৩ আগস্ট) বিষয়টি নিয়ে মহুয়া মৈত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও একটি পোস্ট করেছিলেন। এতে তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দিল্লি পুলিশকে ইঙ্গিত করে লেখেন—“আজ অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ সমস্ত সীমা ছাড়িয়েছে। বাংলার বঙ্গভবনকে লেখা একটি সরকারি চিঠিতে তারা বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করেছে। আমাদের মাতৃভাষা, ভারতের ২২টি অনুমোদিত সরকারি ভাষার একটি, ১১টি ধ্রুপদি ভাষার একটি, ভারতের জাতীয় সংগীতের ভাষাকে আজকে বিদেশি তকমা দিয়ে অবৈধ প্রমাণ করতে বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দিল্লি পুলিশের এখনই ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং এই চিঠি যে বা যারা লিখেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। ”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ইস্যুতে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গত রোববার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া ভাষায় কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশকে বিষয়টি নিয়ে আক্রমণ করেছেন। মমতার অভিযোগ, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালি ভাষাভাষী মানুষদের অপমান ও হেয় করার জন্য সংবিধানবিরোধী ভাষা ব্যবহার করছে।

মমতা বলেন, ‘দিল্লি পুলিশের এই মন্তব্য শুধু লজ্জাজনক নয়, এটি একেবারে অপমানজনক, সংবিধান-বিরোধী এবং জাতি বিরোধী। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা। জাতীয় সংগীতের ভাষা বাংলা—সেই ভাষাকে এখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশি! এটা সমস্ত বাঙালিকে অপমান করার শামিল।’

মমতা দাবি করেন, কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি সরকার এই ভাষা বিদ্বেষী মনোভাব দিয়ে বাঙালিদের অসম্মান করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং দেশজুড়ে প্রতিবাদ চাই। এই সরকার বাংলা ভাষার মর্যাদা নষ্ট করতে চায়, যা আমরা মেনে নেব না।’

এই ঘটনাকে ঘিরে ভারতের বাংলাভাষী শিল্পী-সাহিত্যিকদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পরিচালক সৃজিত মুখার্জি লিখেছেন, ‘ওটা বাংলাদেশি ভাষা নয়, মূর্খরা, ওটা বাংলা। জাতীয় সংগীতের ভাষা।’

গায়ক রূপম ইসলাম ভাষায়, ‘বাংলা কি ভারতের ২২টি সরকার স্বীকৃত ভাষার মধ্যে নেই? তাহলে একে বাংলাদেশি ভাষা বলা হল কেন? এটা চরম মূর্খতা।’

এদিকে শাসকদল বিজেপির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বলা হচ্ছে, ভোটের আগে মমতা বিষয়টিকে ইস্যু হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য বাংলা ভাষাকে ভোটের আগে অস্ত্র করতে চাইছেন। বেআইনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন।’

তবে এই মন্তব্যের পাল্টা জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুর আড়ালে আসল উদ্দেশ্য হলো বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ছোট করা হচ্ছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button