শিরোনাম

বিয়ে করতে ডেনমার্ক ছুটছেন বিদেশিরা, হলের সিরিয়াল পাচ্ছেন না স্থানীয়রা

বিয়ে করতে ডেনমার্ক ছুটছেন বিদেশিরা, হলের সিরিয়াল পাচ্ছেন না স্থানীয়রা

পোল্যান্ডে জটিল নিয়মকানুনের কারণে বিয়ে করতে না পেরে, ম্যাগডালেনা কুজাভিনস্কা ও তাঁর কলম্বিয়ান বাগ্‌দত্তা হেইনার ভ্যালেনজুয়েলা কোপেনহেগেনে চলে আসেন। সেখানে মাত্র ১০ মিনিটের এক অনুষ্ঠানেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়!

৩০ বছর বয়সী কুজাভিনস্কা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘পোল্যান্ডে বিয়ে করা যে এত কঠিন, তা আমরা জানতাম না।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘আপনি যে অবিবাহিত, বিয়ের আগে তার একটা সার্টিফিকেট দরকার। কলম্বিয়া বা পোল্যান্ড থেকে এই সার্টিফিকেট আনা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। এর মেয়াদ মাত্র তিন মাস। কিন্তু সব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শেষ করে এই সার্টিফিকেট আনতেই তিন মাস পেড়িয়ে যেতো।’

ম্যাগডালেনা কুজাভিনস্কা ও হেইনার ভ্যালেনজুয়েলা পোল্যান্ডের ক্রাকোতে থাকেন। তিন বছরেরও বেশি সময় আগে তাদের মধ্যে বাগদান সম্পন্ন হয়। কিন্তু জটিল নিয়মকানুনের কারণে তারা বিয়ে করতে পারছিলেন না। অবশেষে, এক সহকর্মীর কাছ থেকে ডেনমার্কের সহজ বিয়ের আইন সম্পর্কে জানতে পারেন কুজাভিনস্কা।

এরপর তারা একজন অনলাইন ওয়েডিং প্ল্যানারের সাহায্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করেন এবং চার দিনের মধ্যেই ডেনমার্কে তাদের বিয়ের অনুমতি পান। কুজাভিনস্কা হাসিমুখে বলেন, ‘চার দিনের মধ্যেই আমরা বিয়ের অনুমতি পেয়ে গেছি!’

ডেনমার্কে বাস করেন না এমন দম্পতিরা, বিশেষ করে ভিন্ন লিঙ্গ বা সমলিঙ্গ উভয় ধরনের যুগলই এই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান (ডেনমার্ক) দেশে এসে বিয়ে করছেন। এর ফলে অনেকে কোপেনহেগেনকে ‘ইউরোপের লাস ভেগাস’ বলে ডাকছেন।

কোপেনহেগেন সিটি হলের বিবাহ অফিসের প্রধান অনিতা ওকেলস বিরক থমসন জানান, গত বছর সেখানে প্রায় ৮ হাজার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ দম্পতিই ছিলেন বাইরের দেশের। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগের তুলনায় এটি প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্বের সব জায়গা থেকে তারা আমাদের এখানে শুধু বিয়ে করতেই আসছেন।’

তবে বিদেশি দম্পতিদের ভিড় বাড়ায় কোপেনহেগেন শহর কর্তৃপক্ষ কিছুটা চিন্তায় পড়েছে। কারণ সিটি হলে বিয়ের অনুষ্ঠানের চাহিদা এখন এত বেশি যে, স্থানীয়দের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

কোপেনহেগেনের সংস্কৃতি ও বিনোদন বিষয়ক কর্মকর্তা মিয়া নাইগার্ড জানান, রাজধানীতে বিদেশি দম্পতিদের বিয়ের সংখ্যা ‘ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায়’ আমাদের স্থানীয় দম্পতিদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। নাইগার্ড জানান, অক্টোবরের শেষ থেকে সিটি হলের মোট বিয়ের সময়ের প্রায় ৪০ শতাংশ কোপেনহেগেনের স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যদিও সিটি হলে বুকিং করাই শহরের মধ্যে বিয়ে করার সবচেয়ে সহজ উপায়, তবে প্রাইভেট রেজিস্ট্রারদের মাধ্যমেও বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়, এবং এই নতুন নিয়মে সেগুলোতে কোনো প্রভাব পড়বে না। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর কোপেনহেগেনের আইনপ্রণেতারা শহরের বিয়ের স্থানগুলোর ওপর থেকে চাপ কমাতে আরও কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখবেন।

বিয়ের জন্য কেন ডেনমার্ক এত জনপ্রিয়?

ডেনমার্কের বিবাহ আইন বেশ উদার। ১৯৮৯ সালে এটি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সমলিঙ্গের সিভিল ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২০১২ সালে সমলিঙ্গের বিবাহও বৈধ হয়।

এ ছাড়া, সব ধরনের বিবাহের জন্য ডেনমার্ক ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশের মতো নয়। তারা জন্ম সনদ বা অবিবাহিত থাকার প্রমাণ চায় না। ডেনমার্কে বিয়ের জন্য শুধু একটি সার্টিফিকেট দরকার হয়। এটি পেলে চার মাসের মধ্যে ডেনমার্ক সরকার বিয়ের অনুমতি দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, যদি ডিভোর্সের কাগজপত্র পরিষ্কার না হয়, তবে কর্মকর্তারা একটি সিভিল স্ট্যাটাস সার্টিফিকেট চাইতে পারেন।

ডেনমার্কের ফ্যামিলি ল এজেন্সিতে আবেদন করতে ২ হাজার ১০০ ক্রোন (৩২৬ ডলার) খরচ হয় এবং যদি সব শর্ত পূরণ হয়, তাহলে দম্পতিরা পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সার্টিফিকেট পেয়ে যান। এদিকে, অভিবাসী বা অন্য কোনো দেশের দম্পতিরা শুধু একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে ডেনমার্কে বিয়ে করতে পারেন।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button