শিরোনাম

এক মসজিদের ৩ নামে ৩ বরাদ্দ, অর্থ আত্মসাৎ

এক মসজিদের ৩ নামে ৩ বরাদ্দ, অর্থ আত্মসাৎ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমীন মাদানীর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদের উন্নয়নে দুই অর্থবছরে তিনটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রকল্পের কাজই পূর্ণতা পায়নি। একটির কাজ করাই হয়নি, অন্যটির কাজ আংশিক হয়ে থেমে আছে, আরেকটিতে কেবল নামফলক বসিয়েই কাজ সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব প্রকল্প ঘিরে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের পাঁচপাড়ায় কারিগরি কলেজসংলগ্ন জমিতে একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে মসজিদটি অবস্থিত। তিনটি প্রকল্পে এই মসজিদের কথা বলা হলেও প্রকল্পপত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ভিন্ন তিনটি নাম। একটিতে ‘চকপাড়া মাদ্রাসাসংলগ্ন নতুন জামে মসজিদ’, অন্যটিতে ‘নিউ মাদানী জামে মসজিদ’ ও তৃতীয়টিতে ‘চক পাঁচপাড়া নতুন জামে মসজিদ’।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি ও রাজস্ব খাতের আওতায় চকপাড়া মাদ্রাসাসংলগ্ন নতুন জামে মসজিদের নাম ব্যবহার করে ৪০ লাখ টাকার প্রকল্পে ছাদের কাজ দেখানো হয়। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জাহাঙ্গীর আলম’। স্বাভাবিকভাবেই ভিত্তি না থাকায় এই ছাদের কাজ বাস্তবে হয়নি। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরের নথিতে প্রকল্পটিকে ‘বাস্তবায়িত’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে প্রতিবেদন।

পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাধারণ সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (জিএসআইডিপি-২) আওতায় নিউ মাদানী জামে মসজিদের নামে ৪২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এতে ভিত্তি নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত হয়েছে ২০ শতাংশের মতো। এ কাজের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘লিজেন্ড এগ্রো ফার্ম’। কাজের মেয়াদ শেষ হলে তা আবার বৃদ্ধির কথা জানিয়ে এই প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যে ২৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর।

একই অর্থবছরে চক পাঁচপাড়া নতুন জামে মসজিদের নাম ব্যবহার করে জেলা পরিষদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ ক্ষেত্রে কেবল নামফলক স্থাপন করে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত দেখানো হয়েছে। এর দায়িত্বে ছিল ‘মেসার্স মাহিন ট্রেডার্স’।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের ভিত্তির জায়গায় মাটির ওপরে কিছু রড দাঁড়িয়ে আছে। কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। রডগুলোতে মরিচা ধরে গেছে। সেখানে কথা হলে স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘এক মসজিদেই কোটি টাকা বরাদ্দ অথচ আমরা সাধারণ মানুষ কিছুই জানি না। সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রেখে বরাদ্দের টাকা লুটপাট করা হয়েছে।’

এ নিয়ে কথা বলতে প্রকৌশল দপ্তর থেকে পাওয়া ঠিকাদারের মোবাইল ফোন নম্বরে কয়েক দিনে একাধিকবার কল দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল্লাহ খন্দকার প্রথমে বলেন, চলমান কাজ (ভিত্তি তৈরি) শেষ হলে আগের প্রকল্পের (ছাদ নির্মাণ) কাজ শুরু করা হবে। ওই কাজের ওয়ার্ক অর্ডার এখনো হয়নি, কেবল প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। তখন প্রশ্ন করা হয়, ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই কাজ বাস্তবায়িত দেখিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে কীভাবে পাঠানো হলো? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ের কোনো তথ্য আমার জানা নেই, নো কমেন্টস।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, ‘এটা তো আমার সময়ের না। এটা দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের। তবে কেন কাজ বন্ধ রয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button