পাঁপড় বিক্রির টাকায় চলে সংসার


৩০ বছর ধরে পাঁপড় বানিয়ে চলেছেন! সেই পাঁপড় বিক্রি করে চলছে সংসার, প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসা ও ছেলের পড়াশোনা। বলছি মাদারীপুর শহরের পাকদি এলাকার হারুন-অর-রশীদ (৬৫) ও মজিদা বেগম (৫০) দম্পতির গল্প।
প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রী মিলিয়ে ময়দা, তেল, হলুদ, ডিমসহ বিভিন্ন মসলা দিয়ে পাঁপড় তৈরি করেন। রোদে শুকানোর পর সেগুলো তেলে ভাজা হয়। এরপর সেগুলো নিয়ে হারুন ছুটে যান গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন গলিতে। তবে কয়েক বছর ধরে বিকেলে মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে এই পাঁপড়।
প্রায় ৩৫ বছর আগে মাদারীপুর শহরের পাকদি এলাকার নাসির উদ্দিনের ছেলে হারুনের সঙ্গে একই জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের সিরাজুল হকের মেয়ে মজিদা বেগমের বিয়ে হয়। ওই সময় হারুন মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা বেতনে মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল এলাকায় একটি পাটকলে কাজ করতেন। পরে সেটি বন্ধ হয়ে গেলে সংসার নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন হারুন। একপর্যায়ে ভাগ্যান্বেষণে ঢাকায় চলে যান তাঁরা। স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন পাঁপড় বানিয়ে বিক্রির কাজ। সেই থেকে ধীরে ধীরে পাঁপড়ই হয়ে ওঠে তাঁদের জীবিকার প্রধান উৎস। পাঁপড় বিক্রির টাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি ঢাকায় দুই মেয়েকে পড়াশোনাও করাতেন তাঁরা।
কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জ্বরের প্রভাবে হারুন-মজিদার বড় মেয়ে মনিরা আক্তার (২৮) শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যান। পরে জায়গাজমি বিক্রি ও ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ করা যায়নি তাঁকে। এ জন্য আবার মাদারীপুরে ফিরতে হয় পুরো পরিবারকে।
মাদারীপুরে ফিরে জীবিকা নির্বাহে পাঁপড় তৈরি ও বিক্রিকে বেছে নিতে হয় তাঁদের। একটি পাঁপড় ১০ টাকায় বিক্রি হয়। তাতে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকায় পুরো সংসার চালাতে হয়।
হারুন জানান, সুস্থ বা অসুস্থ বলে তাঁর জীবনে কিছু নেই। সংসার চালাতে হবে তাই প্রতিদিনই তাঁকে পাঁপড় বিক্রি করতে যেতে হয়। অবশ্য এখন তিনি প্রতিদিন বিকেলে মাদারীপুর লেকপাড় ও বাসস্ট্যান্ডে পাঁপড় বিক্রি করেন। এতে শারীরিক কষ্ট কিছুটা কমেছে। কিন্তু দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না মজিদার। বয়স বাড়ছে। শরীরের ক্ষমতা কমে আসছে দিন দিন। সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা তাঁরও।
হারুন-মজিদা দম্পতির কথা জানেন মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফজাল হোসাইন। তিনি জানান, পরিবারটির ক্ষুদ্র ব্যবসার মূলধন প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী।’