শিরোনাম

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত ছাড়াল ৬০ হাজার

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত ছাড়াল ৬০ হাজার

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৪ জন। এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন ত্রাণ সহায়তা প্রত্যাশী। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সহিংসতা আংশিক বন্ধ রাখার ঘোষণা থাকলেও মানবিক ত্রাণ বিতরণ চলাকালে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর ফলে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৪ জনে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন তাদের নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় ‘দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি এখন বাস্তব হয়ে উঠেছে।’ সংস্থাটি জানিয়েছে, খাদ্য গ্রহণ ও অপুষ্টির দিক থেকে গাজার বেশির ভাগ এলাকায় এখন দুর্ভিক্ষের মানদণ্ড পূরণ হয়েছে।

তীব্র খাদ্য সংকটে ভোগার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষের সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে এবং গাজা শহরে তীব্র অপুষ্টির ক্ষেত্রেও দুর্ভিক্ষের সীমা ছুঁয়ে গেছে।’

প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ভেঙে পড়ার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, প্রতি তিনজন গাজাবাসীর একজন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সংস্থাটির ভাষ্য, ‘নিরবচ্ছিন্ন সহিংসতা, গণ বহিষ্কার, মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা, এবং স্বাস্থ্যসেবা–সহ প্রয়োজনীয় সেবা ব্যবস্থার ভেঙে পড়ার ফলে গাজার সংকট ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী মোড় নিয়েছে।’

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘এই সত্য এখন অস্বীকার করার সুযোগ নেই। গাজাবাসীরা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটি কোনো সতর্কবার্তা নয়, এটি আমাদের চোখের সামনেই বাস্তব হয়ে উঠছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ত্রাণসাহায্যের ধারা আর ঝরনা নয়, তা যেন হয়ে ওঠে ফোয়ারার মতো প্রবহমান। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানি যেন বাধাহীনভাবে ঢুকতে পারে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব পরিস্থিতিকে ‘এক দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘এই দুঃস্বপ্নের শেষ হওয়া জরুরি। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ঠেকাতে এখনই সব পক্ষকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।’ গুতেরেস যুদ্ধ বন্ধে ‘তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী মানবিক যুদ্ধবিরতি’ এবং গাজায় মানবিক সংস্থাগুলোর পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তিরও দাবি জানান।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান সংকটে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে অন্তত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮৮ জন শিশু। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে ২০ হাজারের বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩ হাজার শিশুর অবস্থা ছিল গুরুতর।

জাতিসংঘের নারী অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন—এর নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহুস বলেন, ‘গাজার ১০ লাখ নারী ও কিশোরী এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছেন, যেখানে তাদের

অভাবের সঙ্গে জীবন অথবা খাদ্যের জন্য জীবন—এই অসম্ভব পছন্দের মধ্যে একটি বেছে নিতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিভীষিকা শেষ হওয়া দরকার।’ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি ত্রাণ সরবরাহে বাধা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি বন্দিমুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানান।

গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে অবস্থানরতদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি। বিতর্কিত যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর কাছেই এসব গুলির ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন খাবারের আশায়। তাদের অনেকেই গুলিতে আহত হয়েছেন।’

একই দিন প্রথমবারের মতো গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় জানায়, এ চালানে প্রায় পাঁচ লাখ পাউন্ড মূল্যের জরুরি ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। স্টারমার এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি প্রক্রিয়ায় অর্থবহ পদক্ষেপ না নেয়, তবে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

ফ্রান্সও জানিয়েছে, তারা জর্ডানের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজায় ৪০ টন ত্রাণ ফেলার পরিকল্পনা করছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিমান থেকে ত্রাণ সরবরাহকে অকার্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, সীমান্তপথ খুলে দিয়ে নিয়মিত ও নিরাপদ উপায়ে ত্রাণ প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button