রাসুল (সা.)-এর অনুসরণেই রয়েছে মুক্তির পথ


মানবতার মুক্তির দূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের গোটা মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) এর প্রতিটি কথা, কাজ, অনুমোদন, আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, নির্দেশনা মেনে চলা কল্যাণকর। মহান আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-কে উত্তম আদর্শ হিসেবেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহর জীবনের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ—যারা আল্লাহ ও আখিরাতের সাফল্য প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব: ২১)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের সর্বোত্তম আদর্শ। রাসুল (সা.) এর ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, এমনকি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিও আমাদের গোটা মানবজাতির জন্য এক অন্যতম আদর্শ।
তিনি গোটা মানবজাতির জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা বিশ্ব জাহানের জন্য তাকে রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন, ‘ (হে রাসুল) আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
রাসুল (সা.)-এর প্রতিটি কথা, কাজ ছিল শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার এক অন্যতম প্রতীক। আমরা যাতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করি, তার দেওয়া সকল বিধান ঠিকভাবে মেনে চলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারি, এ জন্য আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে আমাদের জন্য সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘ (হে নবী) অবশ্যই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে।’ (সুরা আহজাব: ৪৫)
রাসুল (সা.) শুধুমাত্র মুসলিম জাতির জন্য রহমত হিসেবে পৃথিবীতে আসেন নি, বরং তিনি গোটা মানবজাতির মুক্তির জন্যই মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন। তাই যে ব্যক্তিই রাসুল (সা.)-এর আদর্শকে, জীবন ব্যবস্থাকে মেনে নেবে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হবে। কারণ তার চরিত্রে কোনো ত্রুটি নেই, কোনো দাগ নেই। তিনি ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি ছিলেন সত্যবাদী মানব, যার গোটা জীবনে একটিও মিথ্যা ছিল না। মানুষের আমানত রক্ষায় তিনি ‘আল আমিন’ উপাধি লাভ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও উদার মনের অধিকারী। তিনি কখনো কাউকে কষ্ট দেননি, কারও ক্ষতি করেননি। আল্লাহ তাআলা নিজেই তার প্রিয় রাসুল (সা.) এর চরিত্রের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলাম: ০৪)
রাসুল (সা.) তার নিজের জীবনকে সর্বদা কোরআনের আদেশ নিষেধ অনুযায়ী পরিচালিত করেছেন এবং তার উম্মাতদেরকেও কোরআনের বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করার তাগিদ দিয়েছেন। একমাত্র তার আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই রয়েছে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।
রাসুল (সা.) এর আদেশ নিষেধ মেনে চলা বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আর রাসুল (সা.) তোমাদের যা দেন—তোমরা তা গ্রহণ করো। যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন—তা থেকে বিরত থাকো। আর শুধু আল্লাহকেই ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা হাশর: ০৭)
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর আদর্শ গ্রহণ, অনুসরণ ও অনুকরণই মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র পথ এবং আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার উপায়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘ (হে রাসুল) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন। আর আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১)
সুতরাং আমাদের সবার উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ করা। আমৃত্যু তার আদর্শকে নিজেদের জীবনে ধারণ করা। তাহলেই মিলবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা, মিলবে পরকালীন সফলতা।
লেখক: শামসুন্নাহার সুমনা, বিএ (ফাজিল), মেরীর হাট ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, পলাশ বাড়ি, গাইবান্ধা।
ক্রাইম জোন ২৪