শিরোনাম

সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্বে, ফেরারি আসামি প্রার্থী অযোগ্য, জামানত ৫০ হাজার টাকা

সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্বে, ফেরারি আসামি প্রার্থী অযোগ্য, জামানত ৫০ হাজার টাকা

আদালত ঘোষিত ফেরারি (পলাতক) আসামিদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখতে চায় না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমন ব্যক্তিরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন, আইনে এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ইসি। প্রস্তাব অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্যও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) চূড়ান্ত খসড়ায় এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

চূড়ান্ত খসড়ায় ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) অন্তর্ভুক্ত করাসহ বেশ কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সংশোধিত আরপিওর চূড়ান্ত খসড়া গত মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইসির সূত্র জানায়, প্রস্তাবের কোনো সংশোধন না থাকলে তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করবেন। এর মাধ্যমে আইনে সংশোধনী যুক্ত হবে।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আদালত কর্তৃক ফেরারি ঘোষিত ব্যক্তিরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন বিধান সংশোধনীতে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমসাময়িক বাস্তবতায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা যৌক্তিক। যদি ভবিষ্যতে দেখা যায় যে এটার অপব্যবহার হচ্ছে, তখন আমাদের আবার রিভিউ করতে হবে।’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। সে সময় ইসি এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও পরে তা গ্রহণ করে চূড়ান্ত খসড়ায় যুক্ত করেছে।

সংস্কার কমিশন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান করার প্রস্তাব দিলেও তা ইসির চূড়ান্ত খসড়ায় রাখা হয়নি।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কেউ সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্য হিসেবে থাকলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না।

নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ বলেন, যদি কোনো কারণে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষিত না হয়, বাতিল না হয়, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর সরকার কোনো স্থগিতাদেশ দেয়, সে ক্ষেত্রে ওই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং ওই দলের প্রতীক স্থগিত থাকবে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলের পদধারী নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক নয়। যে দল রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না, সেই দলের নামে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন কি না, সেটা সময় বলে দেবে।

চূড়ান্ত খসড়ায় ‘না’ ভোটের বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে মো. সানাউল্লাহ বলেন, কোথাও একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এতে ‘না’ ভোট বিজয়ী হলে নতুন তফসিল করে ভোট হবে। তবে দ্বিতীয়বারেও অন্য কোনো প্রার্থী না থাকলে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। লটারি প্রথা বাতিল করে সমভোট পড়লে পুনরায় ভোটের বিধান চূড়ান্ত খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত আরপিওর চূড়ান্ত খসড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সেনাবাহিনীও অন্যান্য প্রচলিত বাহিনীর মতো, যেমন পুলিশ, এপিবিএন, র‍্যাব, আনসার, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে তা বাদ দেয়। ফলে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) সেনাবাহিনী শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আয়ের বিবরণী, দেশ ও বিদেশে সম্ভাব্য আয়ের উৎস, নিজস্ব এবং নির্ভরশীল সদস্যদের দেশি-বিদেশি সম্পত্তির বিবরণ জমা দিতে হবে। প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে এবং সংসদ সদস্যের মেয়াদের ৫ বছরের মধ্যে তা প্রমাণিত হলে, সংসদ সদস্যপদ বাতিল করতে পারবে কমিশন।

চূড়ান্ত খসড়ায় পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা ইসির কাছে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে ক্ষমতায়িত করার পাশাপাশি জবাবদিহির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই) ব্যবহার করে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়, এমন কিছু করা যাবে না।

চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট গণনার সময় ফল কেন্দ্রে থাকতে পারবেন। তবে শর্ত রয়েছে, ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে, মাঝখানে বের হওয়া যাবে না।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে যেকোনো রাজনৈতিক দল ১০ লাখ এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান নিতে পারত। খসড়ায় এ দুটিই ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান ব্যাংকিং চ্যানেলে হতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আয়কর রিটার্নেও তা দেখাতে হবে।

খসড়া সংশোধনীতে প্রার্থীর নির্বাচনী জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং জোট সমর্থিত প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে। ইভিএম-সংক্রান্ত সব বিধান বিলুপ্ত করার, পোস্টাল ব্যালট যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button