মিলমালিকদের শুল্ক পুনরায় আরোপের দাবি ও বাজার সংকটের আশঙ্কা


ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানি-সংক্রান্ত সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমেছেন উৎপাদকেরা। তাঁরা এককাট্টা হয়ে জানিয়েছেন, দেশকে সংকটে ফেলে কিছু উৎপাদকের অতিরিক্ত মুনাফার জন্য রাইস ব্র্যান রপ্তানি হোক, তা চান না। মিলমালিকদের দাবি স্পষ্ট, দেশ থেকে রাইস ব্র্যান রপ্তানি বন্ধ রাখতে আগের মতো আবার ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হোক। সরকার যদি তা না করে এবং রপ্তানির সিদ্ধান্ত অটল থাকে, তবে সুযোগ দিতে হবে সবাইকে; শুধু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়।
সম্প্রতি মিলমালিকদের এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশন। মিলমালিকেরা বলছেন, দেশে রাইস ব্র্যান উৎপাদন সীমিত। রপ্তানি বাড়লে সরবরাহ কমে যাবে, দাম বাড়বে, ভোক্তা ভুগবে।
সংগঠনের সভাপতি আব্দুল আজিজ এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকা‘কে বলেন, নীতি এক রকম থাকলে পরিকল্পনা সহজ হয়। কিন্তু কখনো অনুমতি, কখনো শুল্ক—এই ওঠানামা বাজারে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কথা ছিল রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এখন দেখছি কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারেও বেড়ে যায়। তখন সরবরাহ বাড়াতে রাইস ব্র্যান রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এরপর ১৫ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, রাইস ব্র্যান অয়েল ও অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করতে অনুমতি নিতে হবে। ৯ ফেব্রুয়ারি এনবিআর সেই রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তবে মিলমালিকদের মতে, শুল্ক শুধু ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর ছিল। জুলাই থেকে রপ্তানিতে শুল্ক উঠে যাওয়ার পর হঠাৎ গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার দুই দিনে মোট ৪৬ হাজার ৩৯০ টন রাইস ব্র্যান রপ্তানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মজুমদার অ্যাগ্রোটেক পেয়েছে ৩০ হাজার টন এবং বগুড়া মাল্টি ওয়েল পেয়েছে ১৬ হাজার ৩৯০ টন।
কিন্তু মিলমালিকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত বাজারে সংকট ডেকে আনবে। দেশে বছরে ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেলের প্রয়োজন হয়। এর ৯০ শতাংশ আসে আমদানি করা সয়াবিন ও পাম তেল থেকে। ২১টি রাইন ব্র্যান অয়েল মিলে উৎপাদিত তেলে মোট চাহিদার প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পূরণ হয়। মিলমালিকেরা উদাহরণ দিয়ে দেখান, আগের রপ্তানি বন্ধ নীতিতে ফিড মিলের প্রধান কাঁচামাল ডিওআরবির দাম কমে এসেছিল। স্থানীয় বাজারে তেলও সহজলভ্য হয়েছিল এবং মিলগুলোও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ রপ্তানি অনুমোদনে নতুন রিফাইনারি ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফিড মিলের কাঁচামালের দাম বাড়বে এবং ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যও আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাইস ব্র্যান রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল মাত্র ৩৩ হাজার টন।
সরকারি যুক্তি তুলে ধরে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে বছরে প্রায় ৬ লাখ টন কুঁড়ার তেল উৎপাদিত হলেও পুরোটা পরিশোধনের সক্ষমতা দেশের মিলগুলোর নেই। বাজারে চাহিদাও কম। হিসাব করলে দেখা যায়, বছরে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টন তেল উদ্বৃত্ত থাকে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে তেলের চাহিদা ব্যাপক, দামও ভালো পাওয়া যায়; আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত কুঁড়ার তেলের দাম প্রায় ১ হাজার ২০০ ডলার। তাই আমরা চাই, উদ্বৃত্ত তেল নষ্ট না হোক। এই বিবেচনায় রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান যতটুকু রপ্তানির আবেদন করবে, তাকেই অনুমোদন দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ ৩ লাখ টন রপ্তানি হবে।’
মো. মাহবুবুর রহমান আরও জানান, রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ক্রাইম জোন ২৪