শিরোনাম

মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন: সিঙ্গাপুর-মডেল টাউনশিপ পরিকল্পনা

মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন: সিঙ্গাপুর-মডেল টাউনশিপ পরিকল্পনা

কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে সিঙ্গাপুর ও সাংহাইয়ের মতো উন্নত আধুনিক বন্দরকেন্দ্রিক টাউনশিপে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা) নামে আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। নবগঠিত মিডা মহেশখালী-মাতারবাড়ীর সমন্বিত উন্নয়ন নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী) মিডার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহেশখালী- মাতারবাড়ী প্রকল্পের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন দেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক আরও উপস্থিত ছিলেন মিডার সদস্য কমোডর তানজিম ফারুক ও মো. সারোয়ার আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না।

আশিক চৌধুরী তাঁর প্রেজেন্টেশনে মিডার আগামী চার মাসের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, প্রকল্পটি তিন ধাপে সম্পন্ন হবে—প্রথম ধাপ ২০২৫ থেকে ২০৩০, দ্বিতীয় ধাপ ২০৩০ থেকে ২০৪৫ এবং তৃতীয় ধাপ ২০৪৫ থেকে ২০৫৫ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ২৫ লাখ লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে এবং জিডিপিতে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হবে বলে জানান তিনি।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু গভীর সমুদ্রবন্দর নয়, আমাদের একটা ব্লু ইকোনমি গড়ে তোলার ভিশন নিয়ে কাজ করতে হবে। ওই এলাকা শুধু একটা ফ্যাসিলেটিং জোন হিসেবে না, বরং সেখানে একটা নতুন শহরের জন্ম হবে। সেখান থেকে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে কানেক্টিভিটি তৈরি হবে। সমুদ্রই হবে বিশ্বের পথে আমাদের মহাসড়ক।’

গভীর সমুদ্র নিয়ে গবেষণার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। মহেশখালী অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলার ওপরেও জোর দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে যাঁরা বিশেষজ্ঞ আছেন, প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সমুদ্র জগতে কখনো প্রবেশ করিনি। ওটা নিয়ে চিন্তাও করিনি। এ বিষয়ে গবেষণা, ফাইন্ডিংস নেই। এ সম্পর্কিত কী কী গবেষণা রয়েছে, অন্য দেশের গবেষণাপত্র, যেটা আমাদের সাথেও মিলবে ভালো, সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং নিজস্বভাবে গবেষণা করতে হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠান দরকার। একাডেমিয়া গড়ে তুলতে হবে, ওশান ইকোনমি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে।’

এর পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের ওপরও জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার বিষয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানের বনভূমি এখন কী অবস্থায় আছে, ভবিষ্যতে আমরা বনভূমিগুলোকে কী অবস্থায় দেখতে চাই, সেই পরিকল্পনাও করতে হবে।’

পরে আশিক চৌধুরী রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাতারবাড়ী ও মহেশখালীকে নিয়ে মিডার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এটাকে টাউনশিপ হিসেবে দেখতে চাই। পৃথিবীর সবচেয়ে সাকসেসফুল ডিপ সি পোর্টসহ টাউনশিপ হচ্ছে সিঙ্গাপুর। আরেকটা পোর্টের কথা প্রায়ই উঠে আসে, সেটা হচ্ছে সাংহাই। মনে করেন, আমরা বাংলাদেশের একটা সিঙ্গাপুর করতে চাই বা বাংলাদেশের ভেতরে একটা সাংহাই পোর্ট করতে চাই।’

মিডার চেয়ারম্যান বলেন, ‘৩০ বছর পরে আমরা এই মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকাটাকে সিঙ্গাপুর বা সাংহাইয়ের মতো করে দেখতে চাই। এটা কোনো নৌযানের শহর না, এটা একটা স্যাটেলাইট শহর না। এটা হবে শহরতলি, চট্টগ্রামের মতো আরেকটা সম্প্রসারিত শহর; যেটা সংস্কারকৃত এবং নতুন ধরনের।’

চারটি পিলারের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে বলে জানান আশিক চৌধুরী। পিলারগুলো হলো—গভীর সমুদ্রবন্দর ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা; সুবিধা প্রদান কেন্দ্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সামুদ্রিক মাছ ধরার কেন্দ্র। এ প্রকল্প ৩টি ধাপে ২০২৫ থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত কাজ করবে বলে জানান তিনি।

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘তিনটা পিরিয়ডে এই প্রকল্পকে ২০২৫ থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত সাজাতে পারেন। প্রথম পাঁচ বছরকে আমরা বলছি বিকাশকাল; এই সময়ে ফাউন্ডেশনের কাজ, সড়ক সংযোগের কাজ করা হবে। এরপরের সময়টা হচ্ছে পরিবেশ উন্নয়নকাল; সেখানে আমরা বন্দর উন্নয়নের কাজগুলো শেষ করব। সঙ্গে সঙ্গে কিছু শিল্পকারখানা দাঁড়িয়ে যাবে। এটা ২০৪৩-৪৪ সাল পর্যন্ত হবে বলে আমরা আশা করছি। চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা শেষ ১০ বছর একটি পর্যটনের কথা চিন্তা করতে পারি।’

আশিক চৌধুরী উল্লেখ করেন, মাতারবাড়ী-মহেশখালী অঞ্চলকে এমন বহুমাত্রিক প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক কারণে। এর মধ্যে রয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় খসড়া (ড্রাফট); বিদ্যুৎ, জ্বালানি, উৎপাদন ও ভারী শিল্প এবং সামুদ্রিক ও মৎস্যশিল্পের জন্য সমন্বিত একটি পরিবেশ গড়ে তোলার উপযোগী নিকটবর্তী ভূমি।

আশিক চৌধুরী বলেন, এই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরে এ প্রকল্পে ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে।

সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব এপিএইচআরের

বাসস, ঢাকা জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সাবেক ও বর্তমান আইনপ্রণেতাদের প্ল্যাটফর্ম আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) বাংলাদেশ, চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করেছে। গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এপিএইচআরের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। এ সময় তাঁরা এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

সাক্ষাৎকালে এপিএইচআরের সহসভাপতি ও মালয়েশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, ‘দুটি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা উচিত। একটি হলো রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল গঠনে আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টা। আরেকটি হলো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ান-বাংলাদেশ-চীন ত্রিপক্ষীয় উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সম্মেলন।’

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানের সহযোগিতা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে এই আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পুনরায় আহ্বান জানান।

এ সময় মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য ওং চেন, ফিলিপাইনের সাবেক কংগ্রেস সদস্য রাউল ম্যানুয়েল এবং এপিএইচআরের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর চনলাথন সুপাইবুনলার্ডসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button