শিরোনাম

সবই এখন আবুধাবিতে

সবই এখন আবুধাবিতে

প্যারিস থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব প্রায় ৫ হাজার ৮৩৯ কিলোমিটার অথবা ৩ হাজার ৬২৯ মাইল। উড়োজাহাজে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে সময় লাগে ৭-৮ ঘণ্টা। এই দুই শহর অনেক কিছুর সঙ্গে বিখ্যাত লুভর ও গুগেনহাইম জাদুঘরের জন্য। বিশাল দূরত্বের কারণে সকালবেলা লুভর ঘুরে দুপুরে গুগেনহাইম জাদুঘর দেখতে যাওয়া কোনোভাবে সম্ভব নয়; অন্তত এখানকার যোগাযোগব্যবস্থার কারণে। কিন্তু এখন এটা সম্ভব! আরও তথ্য হলো, প্যারিস কিংবা নিউইয়র্ক শহরে না গিয়েও সম্ভব। এমনকি এই দুই জাদুঘরে হেঁটেই যাওয়া যায়!

এসব চটকদার তথ্য দেখে ঘাবড়ে গেছেন তো? তাহলে শুনুন, স্বপ্নের মতো শোনালেও এটি এখন সত্যি হতে চলেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির সাদিয়াত দ্বীপ। এই দ্বীপে তৈরি করা হচ্ছে এক বিশাল সাংস্কৃতিক এলাকা। সেই এলাকায় এক জায়গায় পাওয়া যাবে বিশ্বের নামজাদা জাদুঘরগুলো। সাদিয়াত কালচারাল ডিস্ট্রিক্টে থাকবে লুভর আবুধাবি, গুগেনহাইম আবুধাবি, জায়েদ ন্যাশনাল মিউজিয়াম, প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর এবং ডিজিটাল আর্টের জন্য বিখ্যাত টিম ল্যাব ফেনোমেনা।

এর আগে গুগেনহাইমসহ অনেক জাদুঘরের আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব থাকলেও ফ্রান্সের লুভর জাদুঘরের এটিই প্রথম।

২০০৭ সালের মার্চ মাসে ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে আলোচনা শেষে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির আওতায় আবুধাবিকে লুভর জাদুঘরের নাম ব্যবহার করার জন্য ফ্রান্স অনুমতি দেয় ৩০ বছরের জন্য। এই চুক্তির আলোকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ফ্রান্সকে পরিশোধ করবে মোট ৯৭৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো।

সাদিয়াত দ্বীপে এই প্রকল্প শুরু হয় ২০ বছর আগে, এখন এটি শেষ পর্যায়ে। এর আয়তন প্রায় ২ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার, অর্থাৎ ৩০০টির বেশি ফুটবল মাঠের সমান জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই সাংস্কৃতিক অঞ্চল।

স্থাপত্য হবে বড় আকর্ষণ

সাদিয়াত দ্বীপের এই প্রকল্প শুধু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, সাংস্কৃতিক খাতে পুরো বিশ্বের অন্যতম বড় বিনিয়োগ। সেখানকার ভবনগুলোর নকশা করেছেন ফ্র্যাংক গেরি, জাঁ নুভেল, নরম্যান ফস্টারের মতো বিশ্বের সেরা স্থপতিরা। সে কারণে শুধু ভেতরের শিল্পকর্ম নয়, জাদুঘরগুলোর নিজস্ব স্থাপত্যই পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠবে বড় আকর্ষণ।

যেসব জাদুঘর আছে

ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম

এটি শুধু জাদুঘর নয়, পুরো মহাবিশ্বের গল্প। এখানে থাকবে পৃথিবী ও মহাবিশ্বের ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস।

জায়েদ ন্যাশনাল মিউজিয়াম

এই জাদুঘর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদের স্মরণে তৈরি করা হচ্ছে। এখানে তুলে ধরা হবে দেশের তিন লাখ বছরের ইতিহাস, মরুভূমির বিবর্তন, বেদুইন জীবন, প্রাচীন বাণিজ্য পথ, আরবের সংস্কৃতি এবং আধুনিক রাষ্ট্র গঠন করার গল্প।

লুভর আবুধাবি

প্যারিসে যাঁদের যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তাঁদের জন্য এই জাদুঘর দারুণ এক সুযোগ। ২০১৭ সালে চালু হওয়া এই জাদুঘর প্যারিসের মূল জাদুঘরের প্রথম আন্তর্জাতিক শাখা। এখানে প্রাচীন মিসরীয় শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে রেনেসাঁ যুগের ছবি, আবার আধুনিক শিল্পকর্মও থাকবে।

গুগেনহাইম আবুধাবি

নিউইয়র্কের বিখ্যাত গুগেনহাইম জাদুঘরের নতুন ঠিকানা এখন আবুধাবিতে। এখানে দেখা যাবে ১৯৬০ সালের পরের সময়ের আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকর্ম; বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার শিল্পীদের কাজ।

টিম ল্যাব ফেনোমেনা

এই জাদুঘরে আছে আলো, রং, পানি আর শব্দ দিয়ে বানানো এক পরাবাস্তব দুনিয়া। ভাবুন তো, আপনি হাঁটছেন একটা ঘরে, যেখানে মাটিতে পানি জমে আছে। সেই পানিতে ছোট ছোট গোল বল ভাসছে। আপনি একটু নড়লেই পানিতে ঢেউ উঠছে, বলগুলো নড়ে উঠছে, রং পাল্টে যাচ্ছে, এমনকি বিভিন্ন ধরনের শব্দ হচ্ছে। যেন আপনাকে ঘিরে সবকিছু বদলে যাচ্ছে। যারা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর শিল্পকে একসঙ্গে মিশিয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতা তৈরি করতে চায়, তাদের জন্য এই জাদুঘর অবশ্য দ্রষ্টব্য।

সূত্র: সিএনএন



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button