শিরোনাম

বৃষ্টিভেজা চায়ের বাগান

বৃষ্টিভেজা চায়ের বাগান

ঝুম বৃষ্টিতে জানালার পাশে এক কাপ চা হাতে বসে থাকার এক আয়েশি যাপন আছে বাঙালির। অথবা পাড়ার চায়ের দোকানে বৃষ্টিভেজা দিনে আড্ডা দিতে দিতে চা পান, তাতেও আমাদের জুড়ি মেলা ভার। ফলে নির্দ্বিধায় বলা চলে, চা আমাদের যাপিত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু একটি পানীয়মাত্র নয়, বরং শহর কিংবা গ্রামগঞ্জের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের স্বস্তির চাবিকাঠি।

এবার ভাবুন, এই বর্ষায় চা-বাগানে বসেই দিচ্ছেন চায়ের কাপে চুমুক! চা-পাতায় পড়া বৃষ্টির ফোঁটার ছাট লাগছে আপনার গায়ে। একই সঙ্গে নাকে লাগছে গরম ও সজীব চা-পাতার ঘ্রাণ! না, দৃশ্যটা নিছক কল্পনা বলা যায় না। দেশের যেখানেই থাকুন না কেন, শ্রীমঙ্গল কিংবা মৌলভীবাজারে চলে গেলেই বৃষ্টিভেজা চায়ের বাগান দেখা যাবে। হওয়া যাবে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি।

বছরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলে। বৃষ্টির সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেড়ে যায় এই জনপদে। শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাটি তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায়। এতে চা-গাছগুলো শুকিয়ে যায়। পাতার রং হয়ে যায় লাল। আবার যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন চা-গাছ সজীব হয়ে ওঠে। এই সবুজ পাতা আকৃষ্ট করে সবাইকে। তাই বর্ষা মৌসুমে চা-বাগান ভ্রমণ করার সঠিক সময়। এ সময় সমতল কিংবা টিলা—যেদিকেই তাকানো যাক, চোখে পড়বে সবুজ চা-পাতা। একই সঙ্গে এই সময়ে নারী শ্রমিকদের চা-পাতা সংগ্রহের দৃশ্যও মন কেড়ে নেবে।

শুষ্ক মৌসুমে পর্যায়ক্রমে চা-গাছ ছাঁটাই করে ছোট করে দেওয়া হয়। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা পাওয়ার সঙ্গে তাতে নতুন পাতা গজায়। ২৬ ইঞ্চি উচ্চতার একটি চা-গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা গেলেও সাধারণত ৪-৫ ফুট উচ্চতার গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা হয়। একটি চা-গাছ রোপণ করার ৪-৫ বছর পর নিয়মিত পাতা সংগ্রহ শুরু হয়।

দেশের ১৬৮টি চা-বাগান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে ৯৩টি। ২ হাজার ৭৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জেলায় চা-বাগানের জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭২ দশমিক ৪৪ একর। মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার প্রতিটিতে চা-বাগান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একসঙ্গে ৪০টি চা-বাগান আছে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আর ২২টি রয়েছে কমলগঞ্জে। ফলে মৌলভীবাজার হয়ে উঠেছে চায়ের রাজধানী।

এখানে অনেক চা-বাগানের ভেতরে রয়েছে স্বচ্ছ পানির হ্রদ। এগুলো চা-বাগানের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বর্ষায় চা-বাগানের মেঠো পথ ও চারদিকের পরিবেশ হয়ে ওঠে অপার্থিব সুন্দর।

চায়ের রাজ্যে আকর্ষণ হিসেবে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে এক কাপে সাত রঙের চা পানের আয়োজন। সাতটি স্তরের প্রতিটিতে আলাদা স্বাদ ও রং পাওয়া যায়। এই সাত রঙের চা নীলকণ্ঠ টি কেবিনে পাওয়া যায়। রমেশ রাম গৌড় এই সাত রং চায়ের উদ্ভাবক।

চায়ের রাজধানীকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরোনো চা গবেষণা কেন্দ্র। এটি শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের চা-শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পাকিস্তান চা বোর্ড ১৯৫৭ সালে একটি চা গবেষণা স্টেশন প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বিটিআরআই) প্রধান কার্যালয় হিসেবে উন্নীত করে। চা-বাগান ভ্রমণের সঙ্গে এটিও দেখে ফেলতে পারবেন কোনো এক ফাঁকে।

বর্ষায় চা-বাগানে ঘুরতে এসে দেখা যাবে কারখানায় চা উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরের প্রক্রিয়া। মৌলভীবাজারে ৯৩টি চা-বাগানে চা তৈরির কারখানা রয়েছে প্রায় ৮০টি। এসব কারখানায় বর্ষা মৌসুমে ২৪ ঘণ্টা চা উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগান দিয়ে বাংলাদেশে চা-শিল্পের সূচনা হয়। এটি বাণিজ্যিক রূপ পায় ১৮৫৭ সালে। তবে সিলেট নয়, চায়ের বেশি বিস্তার ঘটে মৌলভীবাজার জেলায়।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ, শমশেরনগর ও কুলাউড়া রেলস্টেশনে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রিকশা নিয়ে বা হেঁটে চা-বাগানগুলো দেখা যায়। বাসে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে শ্রীমঙ্গল অথবা মৌলভীবাজার শহরে নেমে লোকাল বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা হেঁটে চা-বাগানে যাওয়া যাবে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button