বিয়ের আগে ‘তার’ সঙ্গে এই ৮ বিষয়ে আলোচনা করুন


মানুষের জীবনে অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত বিয়ে। তবে বিয়ে মানেই সুখের গন্তব্য নয়; বরং ভুল মানুষকে বেছে নেওয়ার কারণে এই সম্পর্কে অসুখী হতে পারেন। আজকের দিনেও আমরা অনেকে বিয়েকে শুধু সামাজিক প্রথা হিসেবে দেখি, মানসিক প্রস্তুতি ও বাস্তবতার হিসাব-নিকাশ না করেই জীবনসঙ্গী বেছে নিই। অথচ বিয়ের সিদ্ধান্তে থাকা উচিত বিবেচনাবোধ।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৯ সালের আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, এখন ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ মানুষ সঙ্গী ছাড়াই থাকছেন। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৯ শতাংশ। কারণ, খারাপ দাম্পত্যজীবন শুধু দুজন মানুষের নয়, সন্তানের ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তাই বিয়ের আগে ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
সন্তান ও ভবিষ্যৎ পরিবার
বিয়ে মানে অনেকের জন্য একটি পরিবার গড়ার সিদ্ধান্ত। সন্তান নেওয়া কিংবা না নেওয়া—এটি দাম্পত্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। দুজনের মধ্যে এ ব্যাপারে মতভেদের সৃষ্টি হলে ভবিষ্যতে সেটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন বিয়ের আগেই।

অর্থনৈতিক দায়িত্ব ও স্বচ্ছতা
দাম্পত্যজীবনে আর্থিক বিষয় সংকটপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। তাই বিয়ের আগে এ বিষয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। দুজনেরই এমন অর্থনৈতিক অবস্থা থাকা উচিত, যাতে নিজেরা স্বাবলম্বী থাকতে পারেন। কারও ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা ভবিষ্যতে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা ও নিয়ন্ত্রণের কারণ হতে পারে।
শারীরিক সম্পর্ক
দাম্পত্যজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শারীরিক সম্পর্ক। তবে এটি নিয়ে সরাসরি কথা বলা অনেক সময় লজ্জাজনক মনে হয়, কিন্তু না করলে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশা, চাহিদা ও সীমাবদ্ধতা বিষয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে তা দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে মানুষের শারীরিক অবস্থা ও চাহিদা পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি। যৌন সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে দুজনে কি প্রস্তুত? এসব বিষয় আগে জানা থাকলে দাম্পত্যজীবনে মানসিক চাপ কমে যায়।
পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা
আমাদের মতো দেশের সামাজিক কাঠামোয় শাশুড়ি-ননদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের ভূমিকা সম্পর্কে বিরাট প্রভাব ফেলে। সুতরাং বিয়ের আগে সঙ্গীর পরিবার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গীর সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ও জানা জরুরি। এসব পারিবারিক সম্পর্ক যদি সুস্থ না হয়, তাহলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চাপ ও মনোমালিন্য বেড়ে যায়।

পেশা ও ক্যারিয়ার
দাম্পত্যজীবনে কাজের ধরন, ক্যারিয়ারের উন্নতি, একে অপরের পেশাগত পরিকল্পনা নিয়েও মিল থাকা জরুরি। কেউ সংসারের জন্য কাজ থেকে বিরতি নিতে চাইতে পারেন, আবার কেউ পেশাগত জীবনে অগ্রসর হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় দিতে পারেন। এ রকম ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি সমর্থন থাকলে সম্পর্কের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। আর যদি কেউ অন্যজনের ক্যারিয়ারকে কম গুরুত্ব দেয়, তবে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া অসুস্থ শিশুর যত্ন নেওয়া কিংবা পরিবারের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কে কীভাবে সময় দেবেন, এগুলো নিয়েও খোলামেলা আলোচনা করুন এবং সেটা বিয়ের আগেই।
ধর্ম, বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান
ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও দুজনের মধ্যে মিল থাকা বা পারস্পরিক সম্মান থাকা খুবই জরুরি। কেউ যদি ধর্মীয় বিশ্বাসে দৃঢ়, আবার অন্যজন ধর্মীয় ভাবনায় উদাসীন হয়, তবে তা সম্পর্কে সংকটের কারণ হতে পারে। সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলে তা কঠিন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। ছুটির দিন, জন্মদিন, উৎসব পালন—এসব নিয়েও দুজনের একমত হওয়া জরুরি, যেন ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত অসন্তোষ না হয়।
দৈনন্দিন অভ্যাস, শখ ও বিনোদন
দাম্পত্যজীবনে দৈনন্দিন অভ্যাস; যেমন টিভি দেখা, গান শোনা, বই পড়া, প্রাণী পালন, বাগান করা ইত্যাদি নিয়েও পারস্পরিক সম্মতি দরকার। কারও পছন্দের বিষয় অপরের কাছে বিরক্তিকর হতে পারে।
ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা
জীবনসঙ্গীর ব্যক্তিত্ব ও মানসিক পরিপক্বতা বড় বিষয়। কেউ যদি আবেগে অস্থিতিশীল, দায়িত্বহীন কিংবা অন্যকে দোষারোপ করতে অভ্যস্ত হয়, তবে সেই সম্পর্ক স্থির হয় না। অন্যদিকে যদি দুজনেই নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে জানে, নিজের দায়িত্ব নেয় এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তাহলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বিয়ে হুট করে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নয়। এটি ভাবনা-চিন্তায়, খোলামেলা আলোচনা ও সতর্কতার মধ্য দিয়ে নেওয়ার বিষয়। তাই ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের সব দিক নিয়ে একান্তভাবে কথা বলুন, নিজের ও তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিন। এই প্রস্তুতি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনে শান্তি, ভালোবাসা ও স্থিতিশীলতা এনে দেবে।
সূত্র: মিডিয়াম