বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে ৭ মাসে ১১ খুন, উদ্বিগ্ন পুলিশের লিফলেট বিতরণ


বগুড়ায় গত সাত মাসে ছুরিকাঘাতে ১১ জন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪২ জন। ছুরি-চাকুর অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা পুলিশ। এ কারণে জনসচেতনতা বাড়তে রাস্তায় নেমেছেন পুলিশ সুপার নিজেই। তিনি শহরের জনাকীর্ণ এলাকা ঘুরে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী পুলিশ সুপার লিফলেট বিতরণ করেন।
‘ছুরি-চাকুসন্ত্রাস রুখতে হবে এখনই, নিরাপদ বগুড়া, আমাদের হাতেই’ এই স্লোগানসংবলিত জেলা পুলিশের লিফলেটে ছুরি-চাকু বহন ও অপব্যবহার থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জেলা পুলিশের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকা থেকে লিফলেট বিতরণ শুরু করেন। তিনি হেঁটে হেঁটে সাতমাথা থেকে জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক, সার্কিট হাউসের মোড়, কোর্ট চত্বর, জলেশ্বরীতলা কালীবাড়ি মোড়, জেলাখানার মোড়, পৌরসভার মোড়, ডিসি অফিসের মোড় ঘুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সড়কে লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় পথচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষের হাতে লিফলেট তুলে দিয়ে এবং ছুরি-চাকুর অপব্যবহার প্রসঙ্গে কথা বলেন।
বগুড়া জেলা পুলিশের তথ্য অনুয়ায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত জেলায় খুন হয়েছেন ২৮ জন। এর মধ্য ১১ জন খুন হয়েছেন ছুরি-চাকুর আঘাতে। এ ছাড়া ৪২ জন আহত হয়েছেন। জেলার বিভিন্ন থানায় ছুরি-চাকুর ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬১টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯২ জনকে। ছুরি-চাকুসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১৯৩টি।
গ্রেপ্তার আসামিদের অধিকাংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। তুচ্ছ ঘটনায় তারা ছুরিকাঘাত করে। বগুড়া শহরের বিভিন্ন দোকানে ছুরি-চাকু সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ার সার্ভিসের হোম ডেলিভারির মাধ্যমে ছুরি-চাকু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে।
সর্বশেষ বগুড়ায় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এক কলেজশিক্ষার্থী স্কুলপড়ুয়া বান্ধবীর বাড়িতে ঢুকে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। এ দৃশ্য দেখে স্কুলছাত্রীর দাদি এবং ভাবি এগিয়ে এলে তাঁদেরও গলায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওই কলেজশিক্ষার্থী। এতে মারা যান দাদি লাইলী বেওয়া (৭৫) ও তাঁর নাতবউ হাবিবা ইয়াসমিন (২১)। পেটে ছুরিকাহত স্কুলছাত্রী বন্যা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই জোড়া খুনে ঘটনায় গ্রেপ্তার কলেজশিক্ষার্থীকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় কিশোর সংশোধনাগারে। ১৬ জুলাই রাতে বগুড়া শহরের ইসলামপুর (হরিগাড়ি) পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, ‘বগুড়ায় ছুরি-চাকুর অপব্যবহার রীতিমতো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অপরকে ছুরি মারার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রাণও যাচ্ছে। আইন প্রয়োগ করে এসব রোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার প্রতিটি পরিবার থেকে সন্তানদের সচেতন করা। আর এ কারণেই আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রাস্তায় নেমে লোকজনকে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতন করছি।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘যত্রতত্র ছুরি-চাকু বিক্রি বন্ধে পুলিশের অভিযান চলবে। পাশাপাশি অনলাইনে ছুরি-চাকু বিক্রি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’