ড. ইউনূস ’হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম কে


রাজা চার্লস তৃতীয় প্রবর্তিত ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’-এর দ্বিতীয় প্রাপক হিসেবে সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস। যুক্তরাজ্যের রাজকীয় দাতব্য সংস্থা দ্য কিংস ফাউন্ডেশন তাঁর দীর্ঘদিনের সামাজিক ব্যবসা প্রসারের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, টেকসই উন্নয়ন ও প্রকৃতি-সহনশীল উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে।
প্রতিষ্ঠার পর এই পুরস্কার দ্বিতীয়বারের মতো দেওয়া হলো। এর আগে, ২০২৪ সালে প্রথমবার এই পুরস্কার পান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতিক বান কি-মুন। জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তিরক্ষা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় তাঁর নেতৃত্ব ও অবদানকে সম্মান জানাতেই তাঁকে ‘কিং চার্থালস থার্ড হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।
‘হারমনি ফিলোসফি’ বা ‘সঙ্গতির দর্শন’ রাজা চার্লসের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নীতিমালা, যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানবসমাজের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দর্শন অনুসরণ করে যারা বিশ্বজুড়ে টেকসইতা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন, তাঁদের এই পুরস্কারের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এই বছরের বিজয়ী ইউনুস সম্পর্কে পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “অধ্যাপক ইউনুস আজীবন সামাজিক ব্যবসার নীতিমালা প্রচার করে এসেছেন এবং পরিবেশ-সহনশীল ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তাঁর এসব প্রচেষ্টার প্রভাব শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দ্য কিংস ফাউন্ডেশন-এর চেয়ার অফ ট্রাস্টিজ ডেম অ্যান লিম্ব অধ্যাপক ইউনুসের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে রাজপরিবারের সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
রাজা চার্লস দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের পক্ষে সরব কণ্ঠ। সিংহাসনে আরোহণের আগে থেকেই তিনি কৃষিতে জৈব পদ্ধতির ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টিকে রক্ষা করার পক্ষে মত দিয়ে আসছেন। তাঁর এই নীতিগত অবস্থান থেকেই ‘হারমনি ফিলোসফি’-এর সূত্রপাত।
ড. ইউনুস এই পুরস্কারকে শুধু ব্যক্তি হিসেবে নয়, বাংলাদেশ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এক সম্মান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি সামাজিক ব্যবসার পথ ধরেই যে পৃথিবীকে আরও মানবিক ও টেকসই করা সম্ভব, তা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।”
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান এখন টেকসইতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজা চার্লস তৃতীয়র হারমনি অ্যাওয়ার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে রূপ নিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।