জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চারঘাটের ছাত্রদল নেতা


রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাসান মোহাম্মদ আলী দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার গভীর রাতে তাঁকে রাজশাহী থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়েছে। হাসান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া আহত হয়েছেন চারঘাট পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক তুষার আলী ও ছাত্রদল কর্মী সেন্টু। তাঁদের মধ্যে সেন্টু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা সবাই রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদের অনুসারী।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক তুষার ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাসানের বাড়ি মুক্তারপুর এলাকায়। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-ঘাট, দলীয় নিয়ন্ত্রণসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদল ও ছাত্রদলের এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ রয়েছে। উভয়ের মধ্যে সমঝোতার জন্য গত রোববার সকালে উপজেলার মাড়িয়া এলাকায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বাড়িতে বৈঠকে বসে উভয় পক্ষ।
বৈঠকে আলোচনা চলাকালে তুষার ও হাসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এরই একপর্যায়ে হাসানের সমর্থক ছাত্রদল কর্মী মোমিন রড নিয়ে তুষারের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় সমঝোতা বৈঠক ভন্ডুল হয়ে যায়। তুষারের সমর্থকেরা তাঁকে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। এ ঘটনার জেরে গত রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার সরদহ ট্রাফিক মোড়ে ছাত্রদল নেতা হাসানের ওপর অতর্কিত হামলা চালান আহত যুবদল নেতা তুষার ও তাঁর অনুসারীরা।
এ সময় তুষার ও তাঁর সমর্থক শাহানুর দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদল নেতা হাসানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। তাঁদের উপর্যুপুরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাসানের কপাল, ঘাড়, পেট, ডান পায়ের হাঁটু ও পায়ের পাতায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হাসানের সমর্থক সেন্টু তাঁকে বাঁচাতে গেলে তিনিও আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা হাসানের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে তাঁকে ফেলে রেখে চলে যান।
পরে স্থানীয় লোকজন হাসান ও সেন্টুকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। দুজনের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁদের রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে গতকাল রাতে তাঁকে রামেক হাসপাতাল থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা জানান, এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণ, বালু ঘাট, হাটের ইজারা, চাঁদাবাজিসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদল নেতা তুষার ও ছাত্রদল নেতা হাসানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। গত রোববার সকালে একটি সালিসের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চাঁদের উপস্থিতিতেই ছাত্রদল নেতা হাসানের সমর্থক মোমিন যুবদল নেতা তুষারের ওপর হামলা চালান। এরই সূত্র ধরে পরে তুষার ও তাঁর সমর্থকেরা হাসানের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
বক্ত্যবের জন্য বিএনপি নেতা চাঁদকে ফোন দেওয়া হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চাঁদের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) জালাল উদ্দিনকেও ফোন দিয়ে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সর্বশেষ চাঁদের অনুসারী চারঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকিরুল ইসলাম বিকুলকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানকে কয়েক দফা ফোন দিয়েও সাড়া মেলেনি।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমি এখনো জানি না। বিস্তারিত জানতে পারলে জানানো হবে।’