কানে আঙুল না দিলে কি আজান শুদ্ধ হবে


ইসলামে প্রতিটি আমল ও আচার-অনুষ্ঠান এক সুস্পষ্ট সূত্র ও প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত। বিশেষত ইবাদতের ক্ষেত্রে—যেখানে নবীজি (সা.)-এর নির্দেশ, তাঁর নিজস্ব আমল, সাহাবিদের তাৎপর্যপূর্ণ অনুশীলন ও পরবর্তী ফিকহবিশারদদের মতামত বিবেচনায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে একটি সাধারণ দৃশ্য আমরা প্রায়শই দেখি—আজান দেওয়ার সময় মুয়াজ্জিন কানে আঙুল প্রবেশ করিয়ে উচ্চ আওয়াজে আজান দিচ্ছেন। অনেকেই এটি আবশ্যক মনে করেন, আবার কেউ কেউ এটিকে ঐচ্ছিক বা বর্জনযোগ্য বলে থাকেন।
এই লেখায় আমরা কানে আঙুল দেওয়ার এ পদ্ধতির শরয়ি ভিত্তি, হাদিস, ওলামায়ে কেরামের ব্যাখ্যা এবং সমকালীন বাস্তবতার আলোকে একটি পর্যালোচনামূলক আলোচনা তুলে ধরছি।
শরয়ি ব্যাখ্যা ও হাদিস বিশ্লেষণ
আজানে কানে আঙুল দেওয়ার পক্ষে হাদিস রয়েছে। আবু জুহাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি বেলাল (রা.)-কে আজান দিতে দেখেছি, তিনি তাঁর মুখ ডানে-বামে ফিরাচ্ছিলেন এবং তাঁর দুই আঙুল উভয় কানে রেখেছিলেন।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭১১)
হাদিস বিশারদ ইমাম তিরমিজি এই হাদিসকে ‘হাসান সহিহ্’ বলেছেন।
বেশির ভাগ মুহাদ্দিস ও ফকিহ একমত—কানে আঙুল দিলে আওয়াজ বেশি হয়, কারণ কানে শব্দ ঢুকতে না দেওয়ার ফলে নিজের কণ্ঠস্বর আরও জোরালোভাবে বের হয়।
ইমাম তিরমিজি তাঁর হাদিসের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন—জ্ঞানীদের মধ্যে এই আমল প্রচলিত ছিল এবং তারা একে মোস্তাহাব মনে করতেন।
সমকালীন বাস্তবতা ও ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গি
বর্তমান যুগে মাইক্রোফোন, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদির ব্যবহারে কানে আঙুল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রায় নেই বললেই চলে। অধিকাংশ আলেম একমত—রাসুল (সা.) কানে আঙুল দেওয়ার নির্দিষ্ট নির্দেশ দেননি, বরং সাহাবাদের আমলে এটি দেখা গেছে মাত্র।
তাই কেউ যদি আজান দেওয়ার সময় কানে আঙুল না দেন, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। বরং বর্তমান বাস্তবতায় অনেকেই এটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন।
ফিকহি উৎসসমূহ যেগুলো এই মতকে সমর্থন করে—বাদায়েউস সানায়ে: ১ / ৪৭৪, আদদুররুল মুখতার: ১ / ৩৮৮, আল-ফিকহুল ইসলামি ওয়া আদিল্লাতুহু: ১ / ৬০৪, ফাতওয়ায়ে হাক্কানিয়াহ: ৩ / ৫৯
কানে আঙুল দেওয়া একটি মোস্তাহাব আমল হতে পারে, তবে তা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। কেউ দিলে ভালো, না দিলেও কোনো দোষ নেই। মূল বিষয় হলো, আজান সঠিকভাবে, আন্তরিকতা ও শরিয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে দেওয়া। অনাবশ্যক বিষয়কে আবশ্যক রূপে প্রতিষ্ঠা করা কখনোই ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি নয়।
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক