ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি থেকে রেহাই পেল গুগল, তবে শর্ত আছে


যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে চলা বহুল আলোচিত অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় বড় জয় পেল টেক জায়ান্ট গুগল। ওয়াশিংটনের এক আদালত গতকাল মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন, গুগলকে তার জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ‘ক্রোম’ বিক্রি করতে হবে না। তবে প্রতিযোগীদের সঙ্গে ডেটা শেয়ার করতে হবে, যাতে অনলাইন সার্চের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ে।
রায়ের পর গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ার-মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে অ্যাপলও লাভবান হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, গুগল অ্যাপলকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাদের ডিভাইসে গুগল সার্চকে প্রাধান্য দিতে পারবে। এই লেনদেনকে আগেই ‘অন্যায্য’ বলেছিলেন মার্কিন অ্যান্টিট্রাস্ট কর্মকর্তারা। তবে অ্যাপলের শেয়ারও রায়ে ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট জজ অমিত মেহতা রায়ে বলেন, গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমও রাখতে পারবে, যা ক্রোমের সঙ্গে মিলে গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে গুগলকে তার প্রতিযোগীদের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সার্চ ডেটা শেয়ার করতে হবে।
গত পাঁচ বছর ধরে চলা এই মামলাকে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা। গত বছর জজ মেহতা গুগলের বিরুদ্ধে অনলাইন সার্চ ও বিজ্ঞাপন বাজারে অবৈধ একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অভিযোগে রায় দিয়েছিলেন। এবার রায়ের কার্যকর দিকগুলো নির্ধারণ করলেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে আদালতকে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে বলা হচ্ছে, যা কোনো বিচারকের সহজ কাজ নয়।’ তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে গুগলের জন্য বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।
রায়ে জজ মেহতা উল্লেখ করেন, ‘এ ক্ষেত্রে টাকা যেভাবে ঢালাওভাবে ঢুকছে, তা অবাক করার মতো।’ ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতো এআই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে গুগলের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বিশ্লেষক দীপক মথিভানান বলেন, ‘ডেটা শেয়ারের ফলে ভবিষ্যতে গুগলের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়বে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ, নতুন অভিজ্ঞতাগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যবহারকারীদের সময় লাগবে।’
গুগল এক ব্লগপোস্টে বলেছে, ‘ডেটা শেয়ারের ফলে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, আমরা রায়টি বিস্তারিত পর্যালোচনা করছি।’
তবে কোম্পানিটি ইতিমধ্যে আপিল করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মামলার নিষ্পত্তি হতে আরও কয়েক বছর লাগতে পারে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতা আইন কেন্দ্রের পরিচালক উইলিয়াম কোভাচিক বলেন, ‘জজ মেহতা জানেন, সুপ্রিম কোর্টই হবে চূড়ান্ত মঞ্চ। তাই এমন রায় দিয়েছেন, যা সুপ্রিম কোর্টেও টিকতে পারে।’
মেহতার রায়ে বলা হয়, অ্যাপলসহ অন্যান্য ফোন নির্মাতা ও ওয়েব ব্রাউজার প্রস্তুতকারকেরা গুগল থেকে আগের মতোই বিজ্ঞাপন শেয়ারের অর্থ নিতে পারবে। মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষকদের মতে, গুগল প্রতিবছর অ্যাপলকে ২০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে, যাতে আইফোনে গুগল সার্চ ডিফল্ট হিসেবে থাকে।
রায়ে বলা হয়, ‘এআইয়ের উত্থানের ফলে এমন লেনদেন নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে।’
এ ছাড়া, যেসব কোম্পানি তাদের ডিভাইসে গুগলকে ডিফল্ট বা প্রধান সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা এখন চাইলে গুগলের বাইরে অন্য সার্চ ইঞ্জিন বা সার্চ অ্যাপও ব্যবহারকারীদের দিতে পারবে। মেহতার মতে, গুগল এখন থেকে আর একচেটিয়া চুক্তি করতে পারবে না।
এটাই গুগলের একমাত্র আইনি লড়াই নয়। জনপ্রিয় গেম ফোর্টনাইটের নির্মাতা এপিক গেমসের করা মামলায় গুগলকে তাদের অ্যাপ স্টোর নীতিমালা পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুগল জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধেও লড়বে।
এ ছাড়া, সেপ্টেম্বরেই গুগলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার শুনানি শুরু হবে, যেখানে অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে গুগলের একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হবে।
মার্কিন বিচার বিভাগের এ দুই মামলাই বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চলমান দ্বিদলীয় (বিপক্ষ দলসহ) নজরদারির অংশ। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শুরু হওয়া এই নজরদারির আওতায় মেটা, আমাজন, অ্যাপল ও গুগলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স
ক্রাইম জোন ২৪