শিরোনাম

ব্যথার সমস্যায় ভুগছে দেশের ৪ কোটি মানুষ

ব্যথার সমস্যায় ভুগছে দেশের ৪ কোটি মানুষ

শরীরের ব্যথায় কখনো ভোগেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজের এক গবেষণা বলছে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন শরীরে ব্যথার সমস্যায় ভুগছে। তাদের কারও গিরায় ব্যথা, কারও পেশিতে, আবার কেউ হাড়ের ব্যথায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে ব্যথার সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে বাতের ব্যথার রোগীদের জন্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাতের ব্যথার রোগীদের জন্য কাজ করা সংগঠন প্রফেসর নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর) ট্রাস্ট। এটি ছিল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নবমবারের মতো আয়োজন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএনআরএফআর ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ও এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নীরা ফেরদৌস।

অনুষ্ঠানে চিকিৎসকেরা বলেন, দেশে দিন দিন বাতের ব্যথার রোগী বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে অনেক রোগী অপচিকিৎসার শিকার। সরকারের উচিত এদিকে নজর দেওয়া।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। বিশ্বে প্রতিবছর এই রোগে প্রতি লাখে ৪০ নারী ও ২০ জন পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সে হিসাবে দেশে প্রতিবছর রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে।

এ ছাড়া দেশে স্পন্ডাইলো-আর্থ্রাইটিসে ভুগছে সাড়ে ১২ লাখ মানুষ। সোরিয়েটিক আর্থ্রাইটিসের সমস্যাও উদ্বেগজনক। প্রতিবছর এই রোগের রোগী বাড়ছে। গাউট রোগে ভুগছে সাড়ে ৫ লাখ এবং হাইপার ইউরেসেমিয়ায় (ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া) ভুগছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ।

গবেষণা থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছে দেশের সোয়া কোটি মানুষ। আর নতুন করে প্রতিবছর আক্রান্ত হচ্ছে কমপক্ষে ১৩ লাখ। কোমরের বাতব্যথায় (লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস) ভুগছে, এমন রোগীর ১০ শতাংশ বয়সজনিত কোমরের বাতে আক্রান্ত। এই রোগে নতুন করে বছরে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগের বিষয়ে বলা হয়, বিশ্বে প্রতি ৩ সেকেন্ডে এই রোগে একটি হাড় ভেঙে যাচ্ছে। এই রোগে আক্রান্ত ৫০ বছরের বেশি প্রতি তিনজন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজনের এই রোগে হাড় ভেঙে যাচ্ছে। প্রতিবছর হাড় ভাঙার ঘটনা প্রায় ৯০ লাখ। এই রোগীদের মধ্যে মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার প্রাদুর্ভাব বেশি। এই রোগের কারণে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৮ গুণ বেড়ে যায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিএনআরএফআরের চেয়ারম্যান ও এশিয়া প্যাসিফিক লিগ অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নানা কারণে দরিদ্র হচ্ছে। এর মধ্যে চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেশি। অথচ এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা নেই বললে চলে। ব্যথার কষ্টে ভোগা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাসিম আক্তার চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য মো. মুনির হোসেন, মেজর জেনারেল কাজী ইফতেখার-উল-আলম, রোটারি ক্লাব ঢাকার সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ নাহার মাহমুদ, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, পিএনআরএফআরের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক আমিনুর রহমান সাব্বির ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. পীযূষ কান্তি বিশ্বাস।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব ড. আমিনুল ইসলাম, ডেপুটি সেক্রেটারি বর্ষা ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ বাধন দাস, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. এনামুল হক, এম এফ ইসলাম মিলন, বোরহান উদ্দিন, সামিউল হক, জোবায়ের আহমেদ, মো. খোকন প্রমুখ ।

অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তির চেক ও একজন কিডনি রোগীর জন্য আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গ্রামীণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অবদান রাখা সংগঠন ‘হ্যাডস’-এর নির্বাহী পরিচালক মো. বদরুদ্দোজাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button