শিরোনাম

লেনদেনে পড়তি, মূলধন বাড়তি

লেনদেনে পড়তি, মূলধন বাড়তি

দুই মাস ধরে কিছুটা গতি ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজারে। তার আগের পরিস্থিতি মোটেও সুখকর ছিল না। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরে আগের বছরের তুলনায় বাজারের লেনদেন ১৯ শতাংশের বেশি কমেছে। একই সময়ে প্রধান সূচক নেমেছে ৮ শতাংশের বেশি। যদিও এই সময়ের হিসাবে বাজারের মোট মূলধন বেড়েছে দেড় শতাংশের বেশি।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সূচকের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের জন্য সব সময় মূল নির্দেশক নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের পরিমাণ। তাঁদের ভাষায়, লেনদেন কমে যাওয়া বাজারের জন্য ‘চরম’ নেতিবাচক সংকেত, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও বাজারের প্রাণচাঞ্চল্যের ঘাটতি নির্দেশ করে।

লেনদেনের চিত্র: ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৩৮ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ১১৬৯০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ৪৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৩৭ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৪৪৯৯০ কোটি টাকা। সে সময়ে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৬১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে লেনদেন কমেছে প্রায় ২৮ হাজার ৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ১২০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

সূচকের পতন: ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫৯২৪ পয়েন্ট, যা ২০২৫ সালের একই তারিখে দাঁড়িয়েছে ৫৪০৮ পয়েন্টে। অর্থাৎ এক বছরে সূচক কমেছে ৫১৬ পয়েন্ট বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।

মূলধনের বৃদ্ধি : যদিও লেনদেন ও সূচক কমেছে; তবে এরই মধ্যে বাজারের মোট মূলধন কিছুটা বেড়েছে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭০৩৯১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের একই দিনে তা দাঁড়িয়েছে ৭১৫০৭৯ কোটি ২১ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১১৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

লেনদেন কমার কারণ: বিশেষজ্ঞ ও বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুদের হার বৃদ্ধি, ভালো শেয়ারের অভাব, অনেক কোম্পানির আর্থিক দুরবস্থা, আন্তর্জাতিক সংঘাত ও অর্থনীতির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব এবং দেশের রাজনৈতিক চাপ, সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের গবেষণাপ্রধান সেলিম আফজাল শাওন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ, ভারত-পাকিস্তান ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘিরে রাজনৈতিক চাপ, উচ্চ সুদের হার এবং খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সূচক কমে গেলে সাধারণত লেনদেনও কমে যায়। ব্যাংক, বিমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব খাতের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এখন খারাপ, যেখানে আগের বছরগুলোয় কিছুটা ভালো ছিল। ভালো শেয়ারের সংখ্যাও খুব কম। ফলে বিনিয়োগকারীরা আকর্ষণীয় রিটার্ন পাচ্ছেন না। এর বিপরীতে উচ্চ সুদের কারণে অনেকে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন বন্ড মার্কেটে।

বিনিয়োগকারীর সংকট: ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শরীফ আতাউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সূচক তাঁদের কাছে প্রধান নয়, বরং লেনদেনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ভাষায়, ১৫ দিন ধরে লেনদেন বাড়তে শুরু করেছে। তবে এর আগে দীর্ঘ সময় বাজারের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। তিনি জানান, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে। আগে তাঁর হাউসে ১৬ হাজার গ্রাহক ছিল, এখন ৩ হাজারের কম। প্রতিদিন ১০০ জন বিনিয়োগকারী লেনদেনে অংশ নেন না। যাঁরা আছেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশি বিনিয়োগ করার মতো টাকা নেই। যাঁরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁরা এখন সম্পূর্ণভাবে বাজারের বাইরে। বর্তমানে যত লেনদেন হচ্ছে, তার বেশির ভাগ একটি শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কেনার মাধ্যমে হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বক্তব্য: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কমিশন বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাজারে এর কিছু ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে। তাঁর আশা, সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের পর বাজার আরও ভালো অবস্থায় যাবে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button