জট খুলছে ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড ক্রয়ের


অবশেষে ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড কেনার জট খুলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) প্রথম সপ্তাহ থেকে ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড হাতে পাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার কার্ড কিনছে ইসি। গত ২০ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি) বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ইসিকে এ কার্ড সরবরাহ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএমটিএফের ৩ কোটি ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কথা ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার মতো। এতে প্রতিটি কার্ডের মূল্য ধরা হয়েছিল ১৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু পরে ডলারের দাম বাড়ায় প্রতিটি কার্ডের দাম ১৭২ টাকা চায় বিএমটিএফ। এতেও রাজি হয় কমিশন। তবে পরে এই টাকায়ও কার্ড সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করে বিএমটিএফ। ফলে ইসি ও বিএমটিএফের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত বিএমটিএফ ১৭২ টাকা দরেই কার্ড দিতে রাজি হলে এই কার্যক্রমে গতি আসে। তবে দাম বাড়ায় কমে আসে কার্ডের সংখ্যা। ৩ কোটির পরিবর্তে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার কার্ড কেনা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, গত ২৪ মে পর্যন্ত ৭ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ৮৬৫টি কার্ড বিতরণ হয়েছে। আর ইসির হাতে আছে মাত্র ১ লাখ ৫৮ হাজার ব্ল্যাংক কার্ড। প্রিন্ট হওয়া বাকি কার্ডগুলো বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে। কমবেশি ১৯ লাখ ৫০ হাজার কার্ড নষ্ট হয়েছে।
ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ডের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিইএ-২ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে বিএমটিএফ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কয়েকটি ধাপে ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু করবে।
প্রকল্পের মেয়াদ নভেম্বরে শেষ হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আনলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, খরচ না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
যে পরিমাণ ব্ল্যাংক কার্ড কেনা হচ্ছে, তাতে দেশের সব ভোটারের হাতে কার্ড দেওয়া যাচ্ছে না। তাহলে বাকিদের কার্ড কীভাবে দেওয়া হবে? জানতে চাইলে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বাকি কার্ড রাজস্ব খাত থেকে কেনা হবে।
জানা যায়, ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড কেনার বিষয়টি গত ২২ এপ্রিল সভায় ওঠে। পরে ২০ মে সিসিজিপির অনুমোদন পায়। অনুমোদনের তারিখ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে চুক্তি অনুযায়ী সব কর্ড সরবরাহ করবে বিএমটিএফ। জুনের শেষের দিকে উৎপাদন শুরু এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ইসিকে কার্ড সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে বিএমটিএফ।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইডিইএ প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। এর চার বছর পর ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দিতে ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থুর টেকনোলজিসের চুক্তি হয়। ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর থেকে নাগরিকদের মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়। পরে নির্ধারিত সময়ে কার্ড দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ইসি। এরপর দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফের কাছ থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এদিকে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এই বিষয়ে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে সরকারি তহবিল থেকে এই প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হচ্ছে। এদিকে আরও তিন কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড দিতে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেয় কমিশন। এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফের ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় তিন কোটি ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। কার্ডপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছিল ১৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কার্ডপ্রতি ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১৭২ টাকা দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। কমিশন তাতে সায় দিয়েছে। দাম বাড়ায় তিন কোটির পরিবর্তে ২ কোটি ৩৬ লাখ কার্ড কেনার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
গত ২ মার্চ ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন ভোটার। নতুন এই ব্ল্যাংক কার্ড কেনার পরও কোটির বেশি নাগরিক স্মার্ট কার্ড পাবেন না। তাই আপাতত এনআইডি সংশোধন বা হারিয়ে গেলেও মিলবে না স্মার্ট কার্ড। এ ক্ষেত্রে আপাতত আগের মতো লেমিনেটেড এনআইডিই নাগরিকের ভরসা।