বাগেরহাটে আসন কমানোর প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ বিএনপি ও জামায়াত


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমানোর প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি। আজ বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব জেলায় ভোটার সংখ্যা কম, সেখানে আসন কমিয়ে আনার এবং যেখানে বেশি, সেখানে আসন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাগেরহাট-২ ও বাগেরহাট-৩ আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়।
এই প্রস্তাবের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি বিএনপি-জামায়াতও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানের ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলার আয়তন ৩ হাজার ৯৫৯ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ১৩ হাজার। জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি বিবেচনায় এই জেলা এখনো চারটি আসন রাখার যোগ্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পেশাজীবীরা।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট এমনিতেই অবহেলিত শহর। তারপর যদি আরও একটি আসন কমে যায়, তাহলে আরও অবহেলিত হয়ে যাবে। বাগেরহাটে এমনিতেই কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি, আবার যদি আসন চারটি থেকে একটি কমে যায়, তাহলে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে। এটা নির্বাচন কমিশনের ভুল সিদ্ধান্ত।
বাগেরহাট পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান জায়েদ বলেন, বাগেরহাটের অবস্থা এমনিতেই খারাপ, তারপর যদি একটি আসন কমে যায়, তাহলে আরও অবস্থা খারাপ হবে। বিগত সময়ে চারটি আসন থাকা অবস্থায়ও তেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি।
ছাত্রনেতা শেখ আল মামুন বলেন, ‘এখানে যে চারটি আসন ছিল, এটাই আমাদের কাছে কম মনে হয়। সেখানে তিনটি করায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনটি আসন করা হলে রাজনৈতিক দলীয় কোন্দল বাড়বে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ঠিকমতো সংসদে পৌঁছাবে না। তিনটি আসন করা হলে বাগেরহাটের মানুষ অবহেলিত হবে। আমরা বিষয়টি মেনে নেব না। আমরা বাগেরহাটবাসী সবাই মিলে প্রতিহত করব। আমরা চাই, বাগেরহাটে চারটি আসন আছে, চারটি আসনই থাকবে।’
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য খান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাগেরহাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। এখানেই বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ ও মোংলা বন্দর রয়েছে। এর পাশাপাশি জেলায় অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে, আয়তনের দিক থেকেও বাগেরহাট অনেক বড় জেলা। এরপরেও ফ্যাসিস্ট সরকারের শোষণের কারণে বাগেরহাট দীর্ঘদিন অবহেলাতে ছিল। আসন কমানোর এই সিদ্ধান্ত বাগেরহাটকে আরও বেশি অবহেলিত করবে। যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের দাবি, অতি দ্রুত এই সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসবে। তা না হলে বাগেরহাটের মানুষ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।’
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে একটি খসড়া বিজ্ঞপ্তি আমরা দেখতে পেলাম। বাগেরহাট জেলা একটি বৃহত্তম জেলা, নয়টি উপজেলায় চারটি আসন নিয়ে গঠিত এই জেলা। ১৯৮৪ সাল থেকে এই জেলা চারটি আসন নিয়ে গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে খসড়া প্রস্তাব দেখলাম, বাগেরহাটকে তিনটি আসনে রূপান্তরিত করেছে। এটি একটি নিন্দনীয় ব্যাপার, বাগেরহাটের জন্য একটি অপমানিত ব্যাপার। এটি একটি প্রাচীন শহর, এখানে দিন দিন আরও আসন বাড়ানো উচিত। সামনে সংশোধনের নির্বাচন আছে, এই নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে।’
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, ‘বাগেরহাটে চারটি আসন থেকে একটি কমানোকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করছি। সুন্দরবন, ষাটগম্বুজের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য যেখানে রয়েছে, সেই জায়গাটাকে দুর্বল করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এটাকে অন্যায় মনে করছি, আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার দাবি জানাচ্ছি। এই দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’
বর্তমানে সংসদীয় আসন রয়েছে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর ও কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (মোংলা ও রামপাল) ও বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা)।