শিরোনাম

অপরিকল্পিত নদী খননে ৭ সেতুতে ধস

অপরিকল্পিত নদী খননে ৭ সেতুতে ধস

সাতক্ষীরায় মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সাতটি সেতু ধসে পড়েছে। এতে সদর ও আশাশুনি উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রামের মানুষের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ, সেতুর নিচ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মাণ করায় এমন বিপর্যয় ঘটেছে।

দুই উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশাশুনির বাকড়া, ব্যাঙদহা ও শিমুলবাড়িয়া এবং সদরের গাভা, এল্লারচর ও সোনাতলায় দুটি সেতু নির্মাণ করা হয় ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়। পরে ২০২২ সালে সেতু ছাড়িয়ে আরও প্রশস্ত করে নদী খনন করা হয়। এর ফলে চলতি বছর কয়েক মাসের ব্যবধানে সাতটি সেতু ভেঙে পড়ে।

সদরের সোনাতলা গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘৭-৮ গ্রামের মানুষ এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করত। ব্রিজটি ভেঙে গিয়ে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ওপারে একটি হাইস্কুল ও একটি প্রাইমারি স্কুল আছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চলাচলেও খুব সমস্যা হচ্ছে। আমরা স্থানীয় উদ্যোগে একটি বাঁশের সাঁকো বানিয়েছিলাম, তা-ও ভেঙে গেছে। এখন খুব অসহায়। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, ব্রিজটা যাতে দ্রুত নির্মাণ করা হয়।’

পাশের গাভা গ্রামের রাহিনুর রহমান জানান, তাঁদের এলাকার সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ ফুট। কিন্তু মরিচ্চাপ নদী খনন করা হয় ৫০ ফুট প্রশস্ততায়। অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ এবং নদী খননের ফলে সেতুটি ভেঙে গিয়ে এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।

আশাশুনি উপজেলার শিমুলবাড়িয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার বড় মোকাম বুধহাটা। সেতু ভেঙে যাওয়ায় সেখানে আমাদের মালপত্র পারাপারে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। আগে এক ট্রলি ইট আনতে ৫০০ টাকা খরচ হতো, এখন খরচ হচ্ছে দেড় হাজার টাকা।’

এ নিয়ে কথা হলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোয়াইব আহমেদ জানান, সাতটি সেতুকে একীভূত করে টেকসইভাবে অন্তত চারটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মরিচ্চাপ নদী। সেই নদীর সাতটি সেতু ভেঙে গেছে। নদী খননের ফলে সেগুলো ভেঙেছে। আমরা চেষ্টা করছি এল্লারচর ব্রিজটি টিকিয়ে রাখতে। সাতক্ষীরায় গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে তিন হাজার কোটি টাকা পাস হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাতটি ব্রিজ একীভূত করে কমপক্ষে চারটি টেকসই ব্রিজ নির্মাণ করতে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে। আগে নদীর যে পরিধি ছিল, এখন সেটা খননের ফলে বেড়ে গেছে। আর বেড়ে যাওয়ার কারণে সেতু ধসে গেছে। আপাতত আমি ইউএনওদের বলেছি কাঠের ব্রিজ করে দিতে।’

যোগাযোগ করা হলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে জানান, এসব সেতু যখন নির্মাণ করা হয়, তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়া হয়নি। অনুসরণ করা হয়নি সিএস রেকর্ড। তাই নদীর পুরোনো প্রস্থ বিবেচনা না করায় সেতুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে সেতু করার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button