শিরোনাম

পরিত্যক্ত ভবনে শতাধিক রোগী

পরিত্যক্ত ভবনে শতাধিক রোগী

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চলছে পরিত্যক্তঘোষিত এক ভবনে। সেখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও সেটিতে এখনো রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে যেমন ভয় ও উৎকণ্ঠা রয়েছে, তেমনি চিকিৎসকেরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ভবনটির ছাদে ফাটল ধরেছে, দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। রড বের হয়ে রয়েছে অনেক জায়গায়। ভবনের একাধিক কক্ষ ব্যবহারের অনুপযোগী হলেও রোগীর চাপে সেগুলোতেও সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ভবনেই চলছে পুরুষ মেডিসিন, সার্জারি ও জরুরি বিভাগের সেবা। অথচ ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১০০ শয্যার এ হাসপাতালে গড়ে ২০০-২৫০ রোগী ভর্তি থাকেন বলে জানা গেছে। এদিকে নতুন ভবন তৈরি হলেও প্রয়োজনীয় জনবল, আসবাবপত্র ও সরঞ্জামের অভাবে, সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৩ সালের জুন মাসে নতুন ওই বহুতল ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০২৪ সালে সেটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গতকাল বুধবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যার বিপরীতে এদিন সেখানে ৩০৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতেই আছে, ১০১ জন। ভবনটির পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ৪৮ ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ৫৩ জন রোগী ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২৩ সালের জুনে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ২০২৪ সালে সেটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু জনবল, আসবাব ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ভবনটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি।

সাধারণ মানুষ বলছেন, নতুন হাসপাতাল তৈরি করে রেখে, পুরোনো ভাঙা ভবনে চিকিৎসা চালানো—এটা কোনো মানবিক কাজ হতে পারে না। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হোক এবং নতুন হাসপাতাল ভবন চালু করে নিরাপদ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক।

আধুনিক সদর হাসপাতালে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী আবু তালেব বলেন, ‘হাসপাতালে জায়গা নেই, আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া নেই। কখন যেন মাথার ওপরের ছাদটা পড়ে যায়।’

চিকিৎসা নিতে আসা রাকিব হাসান বলেন, ‘এখানে এসে মনে হলো—হাসপাতালে নয়, যেন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। সামান্য ভূমিকম্প হলেই এ ভবন আর থাকবে না।’

আরেক রোগী খলিল আলী বলেন, ‘পাশেই তো বিশাল নতুন ভবন তৈরি হয়েছে, সেটা খালি পড়ে আছে। সেখানে আমাদের নিয়ে গেলে কী সমস্যা? এই পরিত্যক্ত ভবনে চিকিৎসা দেওয়া মানে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী মো. মাজিদার রহমান বলেন, ‘ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য তাগাদা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজ দায়িত্বে নেওয়া সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। তবে ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি আমরা তাদের পুনরায় অবগত করব। ভূমিকম্প হলে কোনো ভবন ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে—সে সম্ভাবনা বেশি বা কম হতে পারে। এটি নির্ভর করে ভূমিকম্পের মাত্রা, স্থায়িত্ব, উপকেন্দ্র থেকে ভবনের দূরত্ব, ভবনের কাঠামোগত, গুণগতমান ও আশপাশের অবস্থার ওপর। কাজেই ঝুঁকিকে একেবারে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।’

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই হাসপাতাল চত্বরে মোট সাতটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পাঁচটি ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে যে ভবনটিতে চিকিৎসা চলছে, সেটি শিগগিরই ভেঙে ফেলা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নতুন ভবন চালুর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতির চাহিদা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মঞ্জুরি পেলেই দ্রুত নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু করা হবে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button