ভ্রমণের গোপন চাবি ‘ব্লু মাইন্ড থিওরি’ কী


অবকাশ যাপন করতে গিয়ে অনেকেই বিখ্যাত স্থানে যান, জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় খান, কিংবা যতটা সম্ভব অদেখা স্থান দেখেন। কিন্তু যদি বলি, এই সবকিছুর চেয়ে সত্যিকার তৃপ্তিদায়ক ভ্রমণের রহস্য লুকিয়ে আছে আপনি কতটা জলের কাছে ছিলেন, তার ওপর—তাহলে?
এখানেই হাজির হয় ‘ব্লু মাইন্ড থিওরি’। এটি এমন একটি ধারণা যা ছুটির ধরন বদলে দিতে পারে।
মার্কিন গণমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন ভ্রমণ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছিল। এই তত্ত্ব অনুযায়ী—সমুদ্র, নদী কিংবা হ্রদের পাশে থাকলেই মানুষের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রশান্তি নেমে আসে। ‘ইন্ট্রেপিড ট্রাভেল’-এর আমেরিকা অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট লি বার্নস বলেন, ‘জলের ধারে থাকলেই যেন মন থেকে জট খুলে যায়, একটা বড় নিশ্বাস ফেলার মতো অনুভব হয়। যখন পৃথিবী খুব কোলাহলময় হয়ে ওঠে, তখন জলের কাছে থাকাটা মানসিক স্বস্তির আশ্রয় হয়।’
ভ্রমণ ব্লগার এসথার সুসাগ বলেন, ‘আমি অনেক সময় জলের পাশে কাটিয়েছি এবং ব্লু মাইন্ড থিওরিতে পুরোপুরি বিশ্বাস করি। সমুদ্রের কাছে গেলেই আমরা কেন এমনভাবে শান্ত বোধ করি বা হ্রদে সাঁতার কাটার পর কেন মানসিকভাবে সতেজ হই—এই তত্ত্বই তার ব্যাখ্যা দেয়।’
গবেষণাও দেখিয়েছে, জলের কাছাকাছি থাকলে স্ট্রেস কমে, হৃৎস্পন্দন ধীর হয় এবং সামগ্রিক ভালো লাগার অনুভূতি বাড়ে। এমনকি পানিতে না নেমেও এই উপকার পাওয়া যায়।
জল কেন্দ্রিক ছুটির উপকারিতা কী
জলের ধারে কাটানো অবকাশ শুধু স্মৃতি নয়, মানসিক পুনরুদ্ধারেরও মাধ্যম।
লি বার্নস বলেন, ‘জল আপনাকে টেনে নেয়। আপনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন—অ্যাপ নেই, শব্দ নেই, শুধু তরঙ্গের ছন্দ বা কোনো পাহাড়ি হ্রদের নিস্তব্ধতা। এটা এক ধরনের মানসিক নিরাময়।’
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কায়াকিং, স্নোরকেলিং বা উপকূলীয় ট্রেকিংয়ের মতো জল ঘেঁষা অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপের চাহিদা বেড়েছে।
সুসাগ বলেন, ‘যাঁরা কাজের চাপে ক্লান্ত অবস্থায় আছেন, তাঁদের জন্য এই ধরনের ট্রিপ মানসিক ও শারীরিকভাবে দারুণভাবে উপকারী।’
এই থিওরি মেনে ছুটি কাটানোর সেরা উপায় কী?
লি বার্নসের পরামর্শ হলো—যে সব জায়গায় জলই অভিজ্ঞতার কেন্দ্র, সেসব জায়গা বেছে নিন। হতে পারে তা নৌকা চালানো কিংবা নৌকায় চড়া, কোনো নিভৃত উপসাগর বা জলাধারে সাঁতার কিংবা শুধু সমুদ্রতটে বসে সূর্যোদয় দেখা—এই সবই হতে পারে জলের জাদুতে নিজেকে মেলে ধরার উপায়।
এই ধরনের ভ্রমণ সহজ করতে ছোট দলের গাইডেড ট্যুর বেছে নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে সুসাগ বলেন, ‘ছোট উপকূলীয় শহর বা হ্রদের ধারে ছুটি কাটান। সেখানে গিয়ে বসে থাকুন, জলে পা ভেজান কিংবা শুধু তরঙ্গের দিকে চেয়ে থাকুন। এই অভিজ্ঞতা শুধু ঘোরার নয়, অনুভব করার।’
অর্থাৎ প্রকৃত ছুটি হতে পারে সেই সময়টাই, যখন আপনি ধীরে হাঁটেন, গভীরভাবে শ্বাস নেন এবং জলের কিনারে বসে জীবনটাকে একটু অন্য রকমভাবে অনুভব করেন। ‘ব্লু মাইন্ড থিওরি’ সেই অভিজ্ঞতার দরজা খুলে দেয়।