শিরোনাম
ফুটপাতে বসার জায়গা নিয়ে মারামারি, নিহত ১প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বাংলা একাডেমি পরিদর্শনজাল সনদ জমা দেওয়ায় বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ হারালেন বিএনপি নেতাবিএনপি সরকার গঠন করলে তারেক রহমানই হবেন প্রধানমন্ত্রী: হুমায়ুনস্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙতে মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তিএআই দিয়ে ছবি বিকৃতকারীদের শাস্তির দাবি জানালেন মেহজাবীনব্রাহ্মণবাড়িয়ার এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বিলম্বে অংশ নিতে পারবেন২০২৪ সালে জাপানে জন্মের চেয়ে ৯ লাখ বেশি মৃত্যু ঘটেছেতিনজন আজীবন বহিষ্কার, সনদ বাতিল ১৫ জনেরগর্ত থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা, গ্রেপ্তার ১

বসতবাড়িতে আসছে বিষধর সাপ, দংশনে এক মাসে ১১ জনের মৃত্যু

বসতবাড়িতে আসছে বিষধর সাপ, দংশনে এক মাসে ১১ জনের মৃত্যু

বর্ষা মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সাপের স্বাভাবিক আবাসস্থল। জঙ্গল, ঝোপঝাড় ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাপগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়িতে চলে আসছে। দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। একই সঙ্গে চলছে প্রজননকাল। ফলে এই সময় বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

সরকারি হিসাবে, গেল জুলাই মাসে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাণ হারিয়েছে সাতজন। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে যায়। অন্যরা ওঝা বা কবিরাজের শরণাপন্ন হয়, ফলে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হয় না।

স্বাস্থ্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে মাত্র ১১ দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাপের কামড়ে সাতজন মারা গেছে। মৃত ব্যক্তিরা জেলার নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁ সদর ও নিয়ামতপুর উপজেলায় শিশুসহ আরও দুজন মারা গেছে।

এদিকে সাপ রক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টার জানিয়েছে, আতঙ্কিত হয়ে শুধু জুলাই মাসে রাজশাহী অঞ্চলে ৩০০টিরও বেশি সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলাতেই মারা হয়েছে ২৪৩টি। এ ছাড়া ২৫৭টি সাপ জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, সাপগুলোর বেশির ভাগই আহত।

মারা যাওয়া সাপগুলোর মধ্যে ছিল গোখরা, পদ্ম গোখরা, কালাচ, রাসেল ভাইপার, দাঁড়াশসহ বিভিন্ন বিষধর ও নির্বিষ প্রজাতি। প্রাণিবিদ ও পরিবেশবিদেরা বলছেন, এভাবে সাপ হত্যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, সাপ প্রকৃতির বন্ধু। প্রতিবছর ইঁদুর ফসলের প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষতি করে। সাপ কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্যা বাড়বে, কৃষি উৎপাদন কমে যাবে এবং খাদ্যচক্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, সাপের বিষ থেকে ৪২টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ হারিয়ে গেলে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বড় সংকট দেখা দেবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘বৃহত্তর রাজশাহীসহ খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকেও আমাদের হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী আসে। কিন্তু অধিকাংশই হাসপাতালে আসে দেরিতে। অনেকে প্রথমে কবিরাজের কাছে যায়। তখন আমরা রোগীকে বাঁচাতে পারি না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, অ্যান্টিভেনম যথেষ্ট মজুত আছে। কিন্তু মানুষ হাসপাতালে না এসে ওঝার কাছে যায় বলে মৃত্যুর হার বাড়ছে। নওগাঁর সিভিল সার্জন মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাপে কাটার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। মানুষ সচেতন হলে মৃত্যুর হার কমবে।’

স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান বিশ্বাস জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, বাঘা, চারঘাট, বাগমারা; চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর এবং নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, মহাদেবপুর, মান্দা, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় সাপের বিস্তার বেশি। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার বেশি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, সাপ মারার প্রবণতা যত দিন থাকবে, তত দিন সাপ বিলুপ্তির দিকে যাবে। কামড়ের চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে মানুষ সাপ মারবে না। সাপও বাঁচবে, মানুষও বাঁচবে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button