শিরোনাম

গাজাবাসীর জন্য সাহায্যের আবেদনকে ‘স্ক্যাম’ বলছে ব্লুস্কাই

গাজাবাসীর জন্য সাহায্যের আবেদনকে ‘স্ক্যাম’ বলছে ব্লুস্কাই

একটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ হলে আরেকটি খুলছেন হানিন আল-বাতাশ। গত ছয় মাসে তিনি ৮০টিরও বেশি ব্লুস্কাই অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বলে জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের অবরোধে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি গাজাবাসী এখন দুধ ও ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। জীবন রক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে সহায়তা চেয়ে ব্লুস্কাইতে পোস্ট করছেন আল-বাতাশের মতো বহু মানুষ।

তবে ‘স্ক্যাম’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবারই কয়েক দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে ব্লুস্কাই। আল-বাতাশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অ্যাকাউন্টটি টিকেছিল মাত্র ১২ দিন।

আল-বাতাশ বলেন, ‘আমার সন্তানেরা দুর্বল হয়ে পড়েছে, ওজন কমে গেছে, অপুষ্টিতে ভুগছে, রক্তে আয়রনের মাত্রা খুব কম।’

তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে পাঠান। এসব ছবিতে দেখা যায়, তাঁর দেড় বছর ও তিন বছর বয়সী দুই ছেলে আহমেদ ও আদম একটি গুদামে মেঝেতে বিছানো চটের ওপর শুয়ে আছে।

গোফাউন্ডমি (GoFundMe) ও শাফডের (Chuffed) মতো প্ল্যাটফর্মে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত নীরব হয়ে পড়ছেন গাজাবাসী। ব্লুস্কাইয়ের স্বয়ংক্রিয় স্প্যাম সিস্টেমের কবলে পড়ে পোস্ট ছড়াতে পারছে না।

এক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে একই ধরনের আচরণ নিয়ে আবার আরেকটি অ্যাকাউন্ট খুলছেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়াতেই ব্লুস্কাইয়ের চোখে তারা হয়ে উঠছেন ‘বট’।

আল-বাতাশ বলেন, ‘আমি এখন আর সবাইকে ট্যাগ দিই না। কারণ, ব্লুস্কাই থেকে কঠোর ই-মেইল এসেছিল। তবে এখন আমার পোস্ট কেউ খুঁজেও পায় না।’

এই পরিস্থিতিতে ব্লুস্কাইয়ে গড়ে উঠেছে একটি তৃণমূল পর্যায়ের যাচাইকরণ নেটওয়ার্ক।

জার্মানিতে বসবাসকারী আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী মলি শাহ গাজায় অবস্থানরত ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই করে তাদের পোস্টে ‘ভ্যারিফাইড বাই মলি শাহ’ ট্যাগ যুক্ত করতে সহায়তা করছেন, যাতে তাঁরা বিশ্বাসযোগ্যভাবে সহায়তার আবেদন জানাতে পারেন।

২০২৪ সালের শুরুতে জামাল নামের এক গাজাবাসীর সহায়তা চেয়ে পোস্ট শেয়ার করার মধ্য দিয়ে শাহর এই উদ্যোগ শুরু হয়। তখন তাঁর অনুসারী সংখ্যা ছিল মাত্র ৭ হাজার। এখন সেই সংখ্যা ৫৭ হাজার। যাচাইকৃত তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৩০০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট।

যাচাইয়ের জন্য শাহ ভিডিও কল, পরিচিত ব্যক্তির ভেরিফিকেশন বা নথিপত্র চাওয়ার মতো পদ্ধতি অনুসরণ করেন। কখনো কখনো প্রতারকও ধরা পড়ে, তবে বেশির ভাগই প্রকৃত গাজাবাসী।

তবে শাহ মনে করেন, ‘এই ব্যবস্থা আমাকে অনেকটা কেন্দ্রীয় ভূমিকায় বসিয়ে দিচ্ছে, যা আমি চাইনি।’

গাজার খানে ইউনিসের এক বৃদ্ধা কয়েক দিন ধরে না খেয়ে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সহায়ক ন্যাট ক্যালহুন সেই খবর পেয়ে মাত্র ১১০ ডলার তুলতেই পরদিনই তাঁর কাছে ময়দা পৌঁছে যায়।

ক্যালহুন বলেন, ‘মানুষ বুঝে না, এক দিনেই সাহায্য পৌঁছে যেতে পারে।’

গাজা থেকে সরাসরি অর্থ উত্তোলন সম্ভব নয় বলে ‘রিসিভার’ নামের কোনো মধ্যস্থ ব্যক্তি দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। তিনি ক্যাম্পেইন চালান, টাকা তোলেন ও প্রাপকের কাছে পাঠান। ফলে গাজার বাসিন্দাদের অপরিচিত মানুষের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয়।

এ ব্যবস্থায় প্রতারণার আশঙ্কাও থাকে। যেমন—আল-বাতাশের প্রথম ক্যাম্পেইনটি অ্যারিজোনার একজন নারী চালিয়েছিলেন। প্রায় ৩৭ হাজার ডলার উঠলেও আল-বাতাশ পেয়েছেন ৩৪ হাজার ডলার। বাকি অর্থ কোথায় গেছে জানেন না।

অভিযোগ উঠেছে, ব্লুস্কাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেসব অ্যাকাউন্টকে বট বা স্প্যাম হিসেবে শনাক্ত করছে, তাদের অনেকেই প্রকৃত গাজাবাসী।

সাত হাজার স্বাক্ষরযুক্ত এক খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত অসহায় এই মানুষের সঙ্গে টি-শার্ট বিক্রির বট বা স্ক্যামারের মতো আচরণ করে প্ল্যাটফর্ম শুধু নিষ্ঠুরতাই নয়, বাস্তব সংকটকেও আরও গভীর করেছে।’

ব্লুস্কাই এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তারা গাজাবাসীদের কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে কিছু আচরণ প্ল্যাটফর্মের নীতিমালার পরিপন্থী এবং তারা ‘অথেনটিক অ্যাকাউন্ট’ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে শাহ ও অন্য ভুক্তভোগীরা বলছেন, অ্যাকাউন্ট রিভিউয়ের আবেদন করেও কোনো উত্তর মেলে না। অধিকাংশই কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।

শাহ বলেন, ‘শুরুতে, যখন প্ল্যাটফর্মে মানুষ কম ছিল, ব্লুস্কাইয়ের উচিত ছিল যাচাই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করা।’ এখন কোম্পানিটি বলছে, ‘আমরা স্প্যামারদের সরিয়ে দিচ্ছি।’ তবে তারা আসলে সরিয়ে দিচ্ছে অসহায় মানুষকে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিল মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ব্লুস্কাই। টুইটারের সাবেক প্রধান জ্যাক ডরসি ব্লুস্কাই তৈরি করেছেন। এটি দেখতে ঠিক আগের টুইটার এর মতো। তবে মূল পার্থক্য হলো ব্লুস্কাই ‘ডিসেন্ট্রালাইজড’ বা ‘বিকেন্দ্রীকৃত’।

গত বছরের নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার পর প্ল্যাটফর্মটির নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার বড় সমর্থক ছিলেন এক্সের মালিক ইলন মাস্ক। নতুন প্রশাসনের সঙ্গে মাস্কের গভীরভাবে যুক্ত থাকার কথা রয়েছে। এটি সোশ্যাল মিডিয়াতে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করেছে, যার কারণে অনেকেই এক্স ছেড়ে ব্লুস্কাইতে যোগ দিয়েছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থী নাগরিকেরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button