কোন দেশে সরকারি ছুটি সবচেয়ে বেশি? বাংলাদেশের অবস্থান কত?


‘সরকারি ছুটি’—এ শব্দ দুটি শুনলেই চাকরিজীবীদের মনের ভেতর এক সুখের অনুভূতি বয়ে যায়। একঘেয়ে কর্মজীবনে এক বা দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে এই সরকারি ছুটি যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো বিষয়।
সরকারি ছুটির এই ধারণা দেশভেদে যেমন ভিন্ন, তেমনই ছুটির সংখ্যা ও উপলক্ষও ভিন্ন ভিন্ন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ভিএন এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি সরকারি ছুটি থাকে, বিশ্বের তেমন ৩০টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমটি এই তালিকা তৈরিতে ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ও কন্ডে নাস্ট ট্রাভেল থেকে পাওয়া তথ্য।
বছরে সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে বিভিন্ন উপলক্ষে ৩৫ দিন সরকারি ছুটি থাকে নেপালে। ছুটির এই সংখ্যা নিয়ে দেশটি আছে তালিকার প্রথমে। এরপর আছে ইরান। তাদের বার্ষিক সরকারি ছুটি ২৬ দিন। তারপর ২৫ দিন ছুটি নিয়ে তালিকায় আছে মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার নাম। এরপর আছে কম্বোডিয়া, ভারত, লিচেনস্টেইন, চিলি ও ম্যাকাও। এ দেশগুলোর বছরে সরকারি ছুটির সংখ্যা ২০ দিন। এরপরই আছে লেবানন। তাদের সরকারি ছুটি ১৯ দিন। সবচেয়ে কম ১৫ দিন করে সরকারি ছুটি কাটান পাকিস্তান, লিথুনিয়া ও রোমানিয়ার চাকরিজীবীরা।
ভাবছেন, এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান কত, তাই তো?

সবচেয়ে বেশি সরকারি ছুটি নেপালে
আগেই বলেছি, বছরে ৩৫ দিন ছুটি নিয়ে এ তালিকায় প্রথমে আছে নেপাল। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুধর্মনির্ভর সমাজব্যবস্থায় দশাইন ও তিহারের মতো উৎসব ছাড়াও বৌদ্ধ, ইসলাম ও খ্রিষ্টানধর্মীয় অনুষ্ঠানও সরকারি ছুটির তালিকায় আছে দেশটিতে। নেপালকে এককথায় একটি ‘আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মোজাইক দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ভিএন এক্সপ্রেস। সব ধর্মের উৎসবকে সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয় নেপালে। তবে কিছু ছুটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য।
নেপালে প্রায় প্রতিটি মাসেই ধর্মীয় বা জাতীয় ছুটি থাকে। দশাইন দেশটিতে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। এটি চলে প্রায় ১৫ দিন ধরে। দীপাবলির মতো আলোর উৎসব তিহার চলে ৫ দিনব্যাপী। এ ছাড়া হোলি, ঈদ, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা, মাঘ সংক্রান্তিসহ প্রায় সব সম্প্রদায়ের সব ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় নেপালে।

আনন্দ ও গাম্ভীর্যে ভরা ইরানের ছুটি
প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। মাঝে মাঝে বৃহস্পতিবারও অর্ধেক দিন বন্ধ থাকে দেশটির অফিস-আদালত। এই সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে দেশটিতে সরকারি ছুটির সংখ্যা ২৬ দিন। ইরানের সরকারি ছুটিগুলো মূলত ইসলাম ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং প্রাচীন পার্সি সংস্কৃতির মিশ্রণ। পার্সি নববর্ষের উৎসব নওরোজ, আশুরা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এসব দিন একদিকে যেমন আনন্দের, তেমনি গভীর ভাবগাম্ভীর্যে ভরা।
ইরানিদের বড় উৎসব নওরোজ। এ উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রায় সপ্তাহজুড়ে বন্ধ থাকে। সরকারি ছুটির দিনে ইরানে শুধু অফিস-আদালতই নয়, বেশির ভাগ দোকানপাটও বন্ধ থাকে।

পানির উৎসব মিয়ানমারে
প্রধানত বৌদ্ধধর্মীয় দেশ মিয়ানমারের সরকারি ছুটির সংখ্যা ২৫টি। দেশটিতে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় দিনগুলোয় সরকারি ছুটি থাকে। এ ছাড়া আছে ১০টির মতো জাতীয় দিবসের ছুটি।
মিয়ানমারে নতুন বছরে হয় পানি উৎসব থিংগান। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পানিকেন্দ্রিক উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম। উৎসব চলাকালে রাস্তায় রাস্তায় ওয়াটার গান বা জলবন্দুক ও বালতি দিয়ে একে অপরকে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া এ উৎসব গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপমাত্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হিসেবেও বিবেচিত।
থিংইয়ান উৎসবের সময় ‘থাগ্যামিন’ নামে একটি প্রথা অনুসরণ করা হয়; যেখানে প্রতিটি দিনের জন্য একটি বিশেষ ফুল নির্বাচন করা হয়। এই ফুলগুলো ওই দিনের শুভেচ্ছা ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রতি পূর্ণিমায় ছুটি শ্রীলঙ্কায়
শ্রীলঙ্কায় প্রতি পূর্ণিমায় একটি করে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। একে বলে পোয়া দিবস। এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে প্রতি মাসে একটি পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। এ ছাড়া যদি কোনো মাসে দুটি পূর্ণিমা হয়, তবে দ্বিতীয়টি ‘অধি পোয়া’ নামে পরিচিত হয় এবং সেদিনও ছুটি থাকে। সঙ্গে আছে সিংহল ও তামিল নববর্ষ, বুদ্ধপূর্ণিমা ও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব। এসব উৎসব মিলে এই দ্বীপরাষ্ট্রকে উৎসবের ভূখণ্ডে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশ আছে ৫ নম্বরে
সংবাদমাধ্যম ভিএন এক্সপ্রেসের করা এ তালিকায় ২২ দিন সরকারি ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ আছে ৫ নম্বরে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ফলে স্বাভাবিকভাবে এ ধর্মের ছুটিগুলোর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং জাতীয় দিবসের ছুটি মিলিয়ে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। ঈদ, দুর্গাপূজা, পয়লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস বাংলাদেশের প্রধান সরকারি ছুটি। এ বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী হিসেবে সরকারি ছুটি রয়েছে।
কর্মব্যস্ত জীবনে সরকারি ছুটি স্বস্তির আবহ নিয়ে আসে। এই দীর্ঘ ছুটি নিজেদের মতো কাটানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা চলতে থাকে সবার মধ্যে। সে পরিকল্পনাতেও থাকে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।