জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে: তাহের


জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চায় জামায়াত বলে জানান দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সনদকে আইনি মর্যাদা কীভাবে দেওয়া যাবে। আমাদের মতে, যেভাবে অতীতে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ও প্রোক্লেমেশন র্যাটিফাই হয়েছে, একইভাবে এই সনদ এবং ঘোষণাপত্রকেও সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে।’
আজ বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপের ২২ তম দিনের মধ্যবর্তী চা-বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তাহের।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক জায়গায় একমত হয়েছি। কিছু রিজার্ভেশন রয়েছে, যা আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আকারে দিয়েছি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঐক্যমতের ভবিষ্যৎ কী? আমরা বলেছি, এই ঐক্যমতের ভিত্তিতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে, নইলে এই আলোচনার ফলাফল হবে না।’
তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছে, আগামী পার্লামেন্টে গিয়ে আইন হবে। এটা অবাস্তব ও অসামাজিক বক্তব্য। কারণ, পরবর্তী পার্লামেন্ট গঠিত হবে এই সংস্কারের ভিত্তিতে না হলে আবার পুরনো নিয়মে নির্বাচন হবে।
তিনি জানান, তারা ইতোমধ্যে প্যানেল অব লইয়ার্সের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আইনি ভিত্তি তৈরির কয়েকটি বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে জামাত নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির এটার লিগ্যাল ভিত্তি (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) নির্বাচনের আগেই প্রয়োগযোগ্য, গণভোট, এবং প্রোক্লেমেশন, প্রধান উপদেষ্টা তা ঘোষণা করতে পারেন।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় গণভোট ও প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পার্লামেন্টে র্যাটিফাই করে তা সাংবিধানিক মর্যাদা পেয়েছে। এরশাদের সময়ও একই হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের মেয়াদ বা বৈধতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, আর ৮ আগস্ট সরকার গঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কখনো বলে দেয়নি সরকারের মেয়াদ কতদিন। অতএব, জনগণের অভিপ্রায়ই হচ্ছে সুপ্রিম ল।’
তাহের বলেন, ‘সবশেষে, আমরা চাই এই সনদ ও প্রোক্লেমেশনকে সাংবিধানিক ঘোষণা হিসেবে প্রকাশ করা হোক। পরবর্তী সংসদে এটি র্যাটিফাই হলে কেউ আর আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমতের চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না— এটা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য। আমরা তো বলেছি, যদি বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়, তাহলে তারা দিক। যদি না পারে, তাহলে আমরা বিকল্প পথ খুঁজে নেব।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে তাহের বলেন, ‘আমাদের হাতে দুটি কাগজ আছে—একটি হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি হচ্ছে জুলাই সনদ। সনদ হলো এই সংলাপের আউটকাম। তবে এর খসড়া এখনো অসম্পূর্ণ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐক্যমতের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা আজ অথবা কালকের মধ্যে এর লিখিত জবাব দেব।’
তাহের জানান, জামায়াতে ইসলামীর কমিটিতে বর্তমানে ৪৩ শতাংশ সদস্য নারী। তিনি বলেন, আরপিওতে বলা আছে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক, কিন্তু আমাদের কাছে এই হার তার চেয়েও বেশি। অথচ যারা নারীর অধিকারের কথা সবচেয়ে বেশি বলেন, তাদের দলে এই হার নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, চূড়ান্ত আলোচনার সময় জাতীয় ঐক্য কমিটির প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হোক, যাতে আমরা সরাসরি তার সঙ্গে পয়েন্টগুলো বিনিময় করতে পারি।’