অডিটে ধরা পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার ৫১টি নিরাপত্তা ত্রুটি


এয়ার ইন্ডিয়ায় ৫১টি নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমস্যা খুঁজে পেয়েছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ)। দেশের সব বিমান সংস্থার বার্ষিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে এই তথ্য উঠে এসেছে। গত ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৬০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই দুর্ঘটনার পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
তবে ডিজিসিএ জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার এই ত্রুটিগুলো গত জুনের দুর্ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। ডিজিসিএর নিরীক্ষকেরা জানিয়েছেন, এয়ার ইন্ডিয়ায় সাতটি সমস্যা ছিল সবচেয়ে গুরুতর। তবে এর বিস্তারিত তথ্য তাঁরা জানাননি। খবর বিবিসির।
এয়ার ইন্ডিয়া বলছে, গত বছরের জুলাইয়ে ডিজিসিএ যখন তাদের পরীক্ষা করছিল, তখন তারা ‘পুরোপুরি নিরাপদ’ ছিল। এবার যেসব ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেছে, সেগুলোর সমাধানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা ডিজিসিএকে জানাবে। এয়ার ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত এই ধরনের পরীক্ষা সব বিমান সংস্থাতেই হয়ে থাকে।
ডিজিসিএ ভারতের আটটি বাণিজ্যিক বিমান সংস্থায় মোট ২৬৩টি নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার পরেই রয়েছে অ্যালায়েন্স এয়ার (৫৭টি), ঘোড়াওয়াত স্টার (৪১টি), কুইক জেট (৩৫টি), ইন্ডিগো (২৩টি) ও স্পাইসজেট (১৪টি)।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) মানদণ্ড অনুযায়ী, বিমানের গুরুতর সমস্যাগুলোকে ‘লেভেল ১’ বলা হয়। এ ধরনের সমস্যা বিমানের নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে বিপদে ফেলতে পারে, যার জন্য বিমান সংস্থার লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিতও হতে পারে। ‘লেভেল ২’ সমস্যাগুলো কম গুরুতর, তবে তা-ও বিমানের নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিমান সংস্থাগুলোকে এই সমস্যাগুলো ঠিক করার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়। প্রয়োজনে এই সময় বাড়ানোও যেতে পারে।
এয়ার ইন্ডিয়ার নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো কী
এয়ার ইন্ডিয়ার ঠিক কী কী সমস্যা ছিল, তা পরিষ্কার নয়। তবে একটি সরকারি রিপোর্টের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি, ভুল সিমুলেটর ব্যবহার ও পাইলটদের কাজের তালিকা (রোস্টারিং) ঠিক না থাকার মতো সমস্যা ছিল।
ডিজিসিএর প্রধান ফয়জ আহমেদ কিদওয়াই বিবিসিকে বলেছেন, ‘কিছু সমস্যার বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া নিজেই আমাদের জানিয়েছে। এটি ভালো দিক। তবে আমরা তাদের প্রতিবেদনের সব তথ্য নেব না। আমরা আমাদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন সবকিছু ঠিকঠাক পরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের আকাশ সব সময় নিরাপদ ছিল। আমরা প্রতিবছরই বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে নিরীক্ষা চালাই। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পর এই নিরীক্ষা কঠোরভাবে তদারকি করা হবে।’
২০২০ সালের আগস্টে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে ২১ জন মারা যান। ২০১০ সালের মে মাসেও আরেকটি বিমান দুর্ঘটনায় ১৫৮ জন মারা গিয়েছিলেন। চলতি বছরের জুনের দুর্ঘটনাটি ছিল ১৫ বছরের মধ্যে এমন তৃতীয় ঘটনা।
২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাগুলো ২ হাজার ৪৬১টি কারিগরি ত্রুটির খবর দিয়েছে। এর মধ্যে ইন্ডিগোতে সবচেয়ে বেশি (১,২৮৮টি), তারপর স্পাইসজেটে (৬৩৩টি) এবং এয়ার ইন্ডিয়া ও তার সহযোগী এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে (৩৮৯টি) ত্রুটি পাওয়া গেছে।
ডিজিসিএর প্রধান ফয়জ আহমেদ কিদওয়াই বলেন, ‘বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে নিজেদের কারিগরি ত্রুটি বা কোনো সমস্যা জানানোর প্রবণতা বেড়েছে। এটা ভালো।’ তিনি মনে করেন, সমস্যাগুলো লুকিয়ে রাখার চেয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আনা ভালো। এতে ত্রুটি সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।