লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার শঙ্কা


উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের তিস্তাপারের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার; যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
নদীপারের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কয়েক দিন ধরে ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় উজান থেকে আসছে পানি। ফলে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
রাত ৯টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তাপারের হাজার হাজার পরিবার। ডুবে গেছে তিস্তা চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ।
চরাঞ্চলের সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে নৌকা আর ভেলা। উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যেতে বসেছে আমন ধানসহ নানান ফসলের খেত। ভেসে যাচ্ছে চাষিদের মাছ।
লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ওপর দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে যাওয়ায় সামান্য পানি বাড়লে গোটা জেলার সব উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের সৃষ্ট বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়লে বন্যার পরিধিও বাড়বে। পানি ঢুকবে নতুন নতুন এলাকা। এবার তিস্তা নদীতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বন্যা হয়নি। এটি বন্যায় রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করছে তিস্তাপারের মানুষ।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। নদীতীরবর্তী অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, উজান থেকে পানি আসছে। ইতিমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু কিছু বাড়ি পানিবন্দী হয়েছে। যেভাবে পানি আসছে, তাতে বড় বন্যা হওয়ার ভয়ে আছি। এ বছর বড় কোনো বন্যা তো এখনো হয়নি।
সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যা থেকে হু হু করে বাড়ছে। এতে আমার ইউনিয়নের দেড় হাজারের বেশি পরিবার এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘উজান থেকে পানি আসায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হলেও তা বাড়ছে। রাত ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে। তিস্তাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, নদীতীরবর্তী এলাকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় শুকনো খাবারসহ ভাঙনকবলিতদের জন্য ঢেউটিন মজুত রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সরকারিভাবে প্রস্তুতি রয়েছে।