শিরোনাম

বিতর্কের মধ্যেই ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী বোভকে ফেডারেল আপিল আদালতের আজীবন বিচারক নিয়োগ

বিতর্কের মধ্যেই ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী বোভকে ফেডারেল আপিল আদালতের আজীবন বিচারক নিয়োগ

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক ফৌজদারি মামলার অন্যতম প্রধান আইনজীবী এমিল বোভকে আজীবনের জন্য ফেডারেল আপিল আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সিনেট। তৃতীয় সার্কিট কোর্ট অব আপিলসের এই নিয়োগ ৫০–৪৯ ভোটে পাস হয়, যেখানে ভোট বিভাজন ছিল প্রায় পুরোপুরি দলীয় ভিত্তিতে।

বোভের মনোনয়ন ঘিরে শুরু থেকেই আইন ও বিচার মহলে বিতর্ক চলছিল। শতাধিক সাবেক সরকারি কৌঁসুলি ও বিচারপতি তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আপত্তি জানান। অভিযোগ ছিল, বোভ বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালনের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিকে এগিয়ে নিতে অধস্তনদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন। বিরোধিতা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতেন এমন অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

বিশেষ করে বিচার বিভাগে তাঁর ভূমিকা নিয়ে তিনজন হুইসেলব্লোয়ার গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন দাবি করেন, নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করতে বোভ কৌঁসুলিদের ওপর চাপ দিয়েছিলেন। সেই বৈঠকের একটি অডিও রেকর্ডিং আছে বলেও সিএনএনকে জানিয়েছেন তিনি। তবে, সেই অডিও রেকর্ডিং শুনতে পারেনি সিএনএন।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর কোরি বুকার জানান, তাঁর কাছে বোভের বিরুদ্ধে নতুন কিছু প্রমাণ রয়েছে এবং তিনি সহকর্মীদের তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। হুইসেলব্লোয়ারদের কারো কারো অভিযোগ—বোভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখিয়েছেন, যার ফলে কিছু বন্দি ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এই অভিযোগগুলো সামনে আসার পরও সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি বলেন, তাঁদের তদন্তে বোভের আচরণে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি। বরং ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে তথ্য উপস্থাপন না করার অভিযোগ তোলেন তিনি।

তবে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি দুইজন রিপাবলিকান সিনেটরও বোভের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তারা হলেন আলাস্কার লিসা মারকাওস্কি ও মেইনের সুসান কলিন্স। কলিন্সের ভাষ্য—বোভ নিরপেক্ষ বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে মনে করেন না তিনি।

এদিকে ট্রাম্পপন্থী হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান সিনেটর থম টিলিস বোভের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে, এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনোনীত আরেক অ্যাটর্নির মনোনয়ন আটকে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘স্টাফদের কাছ থেকে ইতিবাচক মতামত পেয়েছি, এবং এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলানোর মতো কিছু দেখছি না।’

২০২৪ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বোভকে তৃতীয় সার্কিট কোর্টের জন্য মনোনয়ন দেন। এর আগেও বোভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে বিচার বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন বোভ। অভিযোগ রয়েছে, মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য বোভ চাপ প্রয়োগ করলে প্রতিবাদস্বরূপ অন্তত ছয়জন কৌঁসুলি পদত্যাগ করেন। তাদের মতে, এটি ছিল অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাডমসের মামলাটি। শেষ পর্যন্ত, একজন ফেডারেল বিচারক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে দেন।

সম্প্রতি আরেক হুইসেলব্লোয়ার অভিযোগ করেন, অভিবাসন মামলার এক বৈঠকে বোভ অধস্তন আইনজীবীদের বলেন, প্রয়োজনে আদালতে গিয়ে ‘ফাক ইউ’ বলতেও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসে দেওয়া সাক্ষ্যে বোভ বলেন, তিনি এমন কথা বলেছেন কি না তা মনে করতে পারছেন না।

রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এবং অভ্যন্তরীণ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের মধ্যেই এমিল বোভ এখন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ আদালতের একজন আজীবন বিচারক। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button