শিরোনাম

ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার ব্যাংক ও কাস্টমসের সামষ্টিক ব্যর্থতা: এনবিআর চেয়ারম্যান

ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার ব্যাংক ও কাস্টমসের সামষ্টিক ব্যর্থতা: এনবিআর চেয়ারম্যান

ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার ঘটনাকে ব্যাংক ও কাস্টমসের সামষ্টিক ব্যর্থতা (কালেকটিভ ফেইলিউর) বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

আজ শনিবার এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের মাধ্যমেই প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ সম্ভব’ শীর্ষক এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক সফটওয়্যার এবং ডেটা কালেকটিভ এজেন্সি আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের কত দাম, তা খুব সহজে জানা সম্ভব। ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় কত দামে এলসি খুলছে, আর আন্তর্জাতিক বাজারে ওই পণ্যের দাম কত, একটু দেখে নিলেই তা জানতে পারে। ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও কাস্টমস বিভাগের রেগুলেশনের ফেইলিউর আছে। আন্ডার ইনভয়েসিং প্রতিরোধে এনবিআর মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু এতে সৎ করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

রাজস্ব বোর্ড সংস্কার প্রসঙ্গে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, শুধু রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা বিভাগ করলেই রাজস্ব আহরণ বাড়বে না। এ জন্য কর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আর শুধু সংস্কার কমিটি করলেই হবে না; সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা না হলে রাজস্ব আহরণে সুফল আসবে না।

পলিসি বাস্তবায়নে এনবিআরের ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আবদুর রহমান খান বলেন, এনবিআরে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়ার কারণেই বিভিন্ন বোল্ড (সাহসী) সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

রাজস্ব আহরণে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মেশিনের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ডিজিটালি র‍্যানডম পদ্ধতিতে ১৫ হাজার ৪০০ ফাইল অডিটের জন্য বাছাই করেছি। এনবিআর এখন অটোমেশনের ওপর জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোতে অনলাইনে আবেদন করে এক ঘণ্টার কম সময়ে ৫ লাখের বেশি আবেদনকারী সেবা পেয়েছেন। গত বছর ১৭ দশমিক ১২ লাখ টিআইএনধারী অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করেছেন। এ বছর সবার জন্য অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট বাধ্যতামুলক করা হচ্ছে।’

আবদুর রহমান খান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই কর প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হচ্ছে। যে পরিমাণ কর আদায় হয়, তার চেয়ে বেশি কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা কর আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সরকার চাইলেই আর কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। জাতীয় স্বার্থে শুধু সংসদ অর্থ বিলের মাধ্যমে কর অব্যাহতির বিষয় বিবেচনা করতে পারবে।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহামেদ চৌধুরী কিরণের সঞ্চালনায় বিতর্ক অনুষ্ঠানে সংস্কারের পক্ষে সরকারি দল হিসেবে অংশ নেয় গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং বিপক্ষে বিরোধী দল হিসেবে অংশ নেয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ। বিচারকদের রায়ে সরকারি দল জয়লাভ করে।

ছায়া সংসদে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এনবিআরকে বিলুপ্ত করে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা আলাদা দুটি বিভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদ বন্ধ করায় ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি সরকার বিবেচনায় নেবে। যদিও এনবিআর বিভক্ত হলে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বাড়তে পারে এবং রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তারা উচ্চ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে পারেন এমন আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিভাজনের প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম প্রকাশ করে সেই শঙ্কা দূর করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বা প্রশাসনিক ভয়ের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ কমে যেতে পারে, যা কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া বর্তমান কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অডিটের নামে ঘুষ-বাণিজ্য—সব মিলিয়ে করদাতাদের আস্থার ঘাটতি রয়েছে।

রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে কর প্রশাসনের দুর্বলতা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে সাতটি সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশগুলো হচ্ছে—করজালের পরিধি বাড়িয়ে স্বচ্ছ ও উৎসাহব্যঞ্জক কর আদায়ের ব্যবস্থা এবং কর ব্যবস্থার পূর্ণ অটোমেশন করা; এনবিআর বিভাজন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আতঙ্ক দূর করতে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া; বিভাজনের ফলে যাতে রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তারা উচ্চ পদে যেতে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিতকরণ; কেইস টু কেইস ভিত্তিতে কর অব্যাহতির সুযোগ বন্ধ; আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করে প্রকৃত মূল্যে আমদানি নিশ্চিতকরণ; করভীতি দূর করে করবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং করের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

ছায়া সংসদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকেরা বিজয়ী হন।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক আবুল কাশেম।

প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button