ভোলায় ঢেউয়ের আঘাতে বেড়িবাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিতে ২ হাজার পরিবার


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনায় জোয়ারের পানি বেড়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার খেজুরগাছিয়ায় বেড়িবাঁধের ২৫০ মিটার ভেঙে গেছে। ফলে সেখানকার প্রায় ২ হাজার পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এর আগে জুনের প্রথম দিকে ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ওই বাঁধ সংস্কারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৪৫ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ (পাউবো)।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) দরপত্রের মাধ্যমে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম দিপু ফরাজি ও উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল বাঁধ সংস্কারের ঠিকাদারি কাজ পান। উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া দুই মাস সময়ের মধ্যে তাঁদের বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারেরা মাটি ভরাটের কাজ করলেও তা জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে সমতলের সঙ্গে মিশে যায়। এর মধ্যে আবারও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীতে অতি জোয়ারে ঢেউয়ের আঘাতে গত শুক্রবার বাঁধটি দ্বিতীয় দফায় ৯০ শতাংশ ভেঙে যায়। ওই দিন রাতেই উপজেলা প্রশাসনসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুই ঠিকাদারকে দেওয়া বাঁধ নির্মাণের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের ভাঙন কবলিত স্থান জিও ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় বাঁধ নির্মাণকাজে শ্রমিকদের বসে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। ভাঙন স্থানটি দেখতে ভিড় জমিয়েছে বিভিন্ন এলাকার আতঙ্কিত মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রথম দফায় গত ২ জুন ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে এই বাঁধ ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দেড় মাস অতিবাহিত হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলে তা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় শনিবার সকাল থেকে বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। দুপুরের মধ্যে জোয়ারের পানির চাপে বেশির ভাগ অংশ ভেঙে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা পুরোপুরি ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে বাড়ি-ঘরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় বেড়িবাঁধের ভেতরের বাসিন্দা নুরে আলম মাঝি বলেন, শুক্রবার সকালে খেজুরগাছিয়া বেড়িবাঁধটি জোয়ারের পানির ঢেউয়ের আঘাতে দ্বিতীয় দফায় ভাঙন শুরু হলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রায় ২ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি রয়েছে। পানি ঢুকে পড়লে তাদের অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে পড়বে।

স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী বসিরউল্লাহ ও বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানান, গত ২ জুন প্রথন দফায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিলে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি নির্মাণের জন্য ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ঠিকাদার কিছুদিন পর মাটি ও জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালান। দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার সকাল থেকে জোয়ারের পানি বেড়ে এবং উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধটির ৯০ শতাংশ বিলীন হয়ে যায়। পরে ওই দিন রাতে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে জিও ব্যাগের কাপড় দিয়ে বাঁধ ভাঙন রোধের চেষ্টা চালানো হয়। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে বেড়িবাঁধের বাকি ১০ শতাংশ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। খুব দ্রুত উপজেলা প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম দিপু ফরাজি ও যুবদলের সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল বলেন, বাঁধ নির্মাণের কাজটি হাতে নেওয়ার পর থেকে কাজ চলমান রয়েছে। শুক্রবার হঠাৎ নিম্নচাপের প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধ ভেঙে যায়। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে জিও ব্যাগের কাপড় দিয়ে ভাঙন ঠেকানো হয়। শনিবার দুপুর থেকে নির্মাণকাজ করে যাচ্ছেন বাঁধশ্রমিকেরা।

চরফ্যাশন উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ২ জুন খেজুরগাছিয়া বেড়িবাঁধটি মেঘনা নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ২৫০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ওই বাঁধ সংস্কারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৪৫ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই ঠিকাদারকে। তাঁরা সেখানে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেন। তবে সাগরে নিম্নচাপের কারণে শুক্রবার বাঁধের একই স্থানে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনকবলিত স্থান জিও ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।’
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কার্যাদেশ পাওয়া দুই ঠিকাদারকে কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’