ঝলমলে হাতিরঝিল এখন বিবর্ণ


ইট-কাঠ-কংক্রিটে ঠাসা দমবন্ধ করা রাজধানী শহরে কিছুটা সময় পরিবারকে নিয়ে ঘুরে আসার এক জনপ্রিয় জায়গা সবুজে ঘেরা হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা। তবে সেনাবাহিনীর হাতে গড়ে ওঠা একসময়ের চোখজুড়ানো সেই হাতিরঝিলের সৌন্দর্য ও স্বাচ্ছন্দ্য আর আগের মতো নেই। এখানে বেড়াতে আসা অনেকে ইদানীং হতাশা নিয়ে ফিরছেন। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, নিরাপত্তার ঘাটতি, নকশাবহির্ভূত দোকানপাট, বিকল বাতি আর হকারের দৌরাত্ম্যের মতো সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসীর পছন্দের এই স্থান।
সম্প্রতি হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঝিলের পাড় ও আন্ডারপাসে গড়ে উঠেছে নকশাবহির্ভূত ২০টির বেশি খাবারের দোকান। আন্ডারপাসে লোকের হাঁটার জায়গা দখল করে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে রেখেছে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানগুলো। সেখানে পড়ে আছে চিপস, আইসক্রিম ও অন্যান্য খাবারের খালি মোড়ক, প্লাস্টিকের বোতল। এ ছাড়া ঝিলের প্রান্তে তৈরি করা অনেক খাবারের দোকান থেকে আবর্জনা ও নোংরা পানি ঝিলে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।
রাজউকের প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পের শুরুতে আড়াই শ ডাস্টবিন স্থাপন করা হলেও বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র ২৯টি। তার মধ্যেও অধিকাংশ ডাস্টবিন নানা কারণে ব্যবহারের অযোগ্য। ফলে বেড়াতে আসা মানুষ বাধ্য হয়ে যত্রতত্র ময়লা ফেলছেন। শবনম হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বললেন, ‘আগে আমরা পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে আসতাম। এখন চারদিকে ময়লা, বিশৃঙ্খলা।’
ঝিলের পাড়ে হকার থাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ওয়াকওয়ের পাশের বসার জায়গাগুলোতে দোকান সাজিয়ে বসে আছেন তাঁরা। এ বিষয়ে একজন হকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘ক্যামেরা না থাকা এলাকাগুলোতে টাকা দিলেই বসতে দেন কোনো কোনো আনসার সদস্য। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান হয়, কিন্তু তাঁরা আবার এসে বসেন।
টাকা দিয়ে হকারদের বসতে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়, তাঁরা সবাই এটি অস্বীকার করেছেন।
একসময় অনেকে দৃষ্টিনন্দন আলোর ঝলকানি দেখতে ভিড় করতেন হাতিরঝিলে। কিন্তু এখন রাতে আলো জ্বলে না প্রকল্পের অনেক জায়গায়। ৩ হাজার ৭৫৬টি বাতির মধ্যে প্রায় অর্ধেক (১ হাজার ৫৭৩) এখন অচল। কিছু বাতি চুরি হয়ে গেছে, কিছু আবার দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। এ সুযোগে সন্ধ্যার পর হাতিরঝিলের কিছু অংশ অপরাধীদের বিচরণস্থলে পরিণত হয়। কিছু কিছু স্থানে মাদকসেবীদের তৎপরতাও দেখা যায়। এসব কারণে সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি রাত নামলে হাতিরঝিলের পরিবেশ ভীতিকর হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছরে লেকের পানিতে কয়েকটি লাশ পাওয়ার কারণে এখানে যাতায়াতকারীদের মধ্যে শঙ্কার মাত্রা বেড়ে গেছে। স্থানীয় তরুণ হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমরা বন্ধুরা লেকের পাড়ে হাঁটতে বের হই, কিন্তু লাইট না থাকার কারণে অনিরাপদ মনে হয়। কিছু এলাকায় নেশাগ্রস্তদের আনাগোনা দেখা যায়।’
সার্বিক বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোজাফ্ফর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাতিরঝিলকে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে রাজউক কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিন শিফটে ১১৮ আনসার সদস্য দায়িত্বে রয়েছেন। তবে চারপাশে বস্তি এলাকা থাকায় এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ময়লা আবর্জনা সৃষ্টি হচ্ছে।’