শিরোনাম
বিলুপ্তির কিনার থেকে ফিরে এল কখনো পোষ না মানা বুনো ঘোড়ার জাতঘুষ নেওয়ায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বরখাস্তহবিগঞ্জে ফেনসিডিলের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে হিন্দুপল্লিতে ভাঙচুর, ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশওগ্রেপ্তার ৯ শিশুর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশরাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে মতানৈক্য, ৩১ জুলাইয়ের আগেই সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশনজুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে: আখতার হোসেনমাদারগঞ্জ মডেল থানার সেই এসআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুচালককে মারধরের জেরে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধশেরপুরে বিএনপির সদর উপজেলা ও শহর কমিটি ঘোষণা

কম কথা বলতে যেভাবে উৎসাহ দিয়েছেন নবীজি

কম কথা বলতে যেভাবে উৎসাহ দিয়েছেন নবীজি

কথা বলার ক্ষমতা আল্লাহর একটি মহান নিয়ামত। কথার মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, সমাজে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে এবং পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।

আমাদের কথার প্রতিটি শব্দ লিপিবদ্ধ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার কাজে সচেতন পাহারাদার ফেরেশতা তার নিকটে রয়েছে।’ (সুরা কাফ: ১৮)

এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের কথার জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। অতিরিক্ত কথা বলার পরিণাম খারাপ হতে পারে।

অতিরিক্ত কথা বলার ক্ষতিকর প্রভাব

অনেক সময় আমরা মনে করি, বেশি কথা বললে মানুষ আমাদের ভালো বুঝবে অথবা এটা আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। কিন্তু বাস্তবে, অতিরিক্ত কথা বলার ফলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বেশি কথা বলার কারণে। উদাহরণস্বরূপ—

  • ১. মিথ্যা বলা: কখনো কখনো কথার মাধ্যমে মিথ্যা বা অপবাদ ছড়ানো হয়।
  • ২. গিবত ও পরনিন্দা: অনেক সময় অন্যদের পেছনে গিবত করা হয়, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
  • ৩. অশ্লীলতা ও অহংকার: অহংকারভরে কথাবার্তা বলা মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে।
  • ৪. ঝগড়া-বিবাদ: বাগ্‌যুদ্ধ বা ঝগড়া সৃষ্টি করার মূল কারণ অকারণ কথাবার্তা।

বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ ‘জামে তিরমিজি’তে বর্ণিত আছে, এক সাহাবি রাসুল (সা.) থেকে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার ক্ষেত্রে কী সবচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক বিষয় মনে করেন?’ তখন রাসুল (সা.) নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, ‘এটাই সবচেয়ে আশঙ্কাজনক।’ এটি প্রমাণ করে, কথার মাধ্যমে মানবজীবনে কত ধরনের বিপদ সৃষ্টি হতে পারে।

সঠিকভাবে কথা বলার পথ

কথা বললে শুধু নিজের কথা বললেই হবে না, প্রথমে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি। তারপর, সত্য যাচাই করে এবং সতর্কভাবে, নম্রভাবে কথা বলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শব্দই লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং সেগুলো আমাদের জীবনের প্রতিফলন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (সহিহ্ বুখারি)

এটি স্পষ্টভাবে আমাদের নির্দেশ দেয়, সঠিকভাবে কথা বলতে হবে। এবং যদি কথার মাধ্যমে কোনো ভালো উদ্দেশ্য না হয়, তবে চুপ থাকা ভালো।

কথা কম বলা মুক্তির পথ

কথা কম বলা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ। কম কথা বললে, মানুষের মধ্যে কম শত্রুতা তৈরি হয়, আর সংগতিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমাদের কথা এবং কাজের মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে, এবং যখন কোনো উপকারী কিছু বলার না থাকে, তখন চুপ থাকাই উত্তম।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নীরব থাকে, সে মুক্তি পায়।’ (জামে তিরমিজি)

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, কথাবার্তায় অতিরিক্ত রকমের আলোচনা না করাই আমাদের মুক্তির জন্য সবচেয়ে ভালো। যখন আমাদের কথার মাধ্যমে কোনো উপকারিতা নেই, তখন চুপ থাকা সঠিক পথ।

কথা বলা একটি মহান নিয়ামত, কিন্তু সেই নিয়ামতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব। অতিরিক্ত কথা বলা শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, সামাজিকভাবেও নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের উচিত, কথার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা, সত্য কথা বলা এবং অন্যের প্রতি সদয় হওয়া। কম কথা বলা এবং নিজের কাজ ও কথার মধ্যে সমন্বয় রেখে চলা, আমাদের জীবনে শান্তি এবং মুক্তি আনবে।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button