বিলুপ্তির কিনার থেকে ফিরে এল কখনো পোষ না মানা বুনো ঘোড়ার জাত


ঘোড়ার দেশ মঙ্গোলিয়া। ত্রয়োদশ শতকে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে এই দেশেরই অশ্বারোহী বাহিনী এশিয়া ও ইউরোপের বিশাল অংশ জয় করেছিল। এই দেশেই একসময় ঘুরে বেড়াত পৃথিবীর সবচেয়ে বুনো ঘোড়ার জাত টাখি। কিন্তু বিশেষ প্রজাতির এই ঘোড়ার সংখ্যা কমতে কমতে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল!
তবে ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন ঘোড়ার এই জাতটিকে আবারও তার প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মঙ্গোলিয়া।
মঙ্গোলিয়ানরা বিশেষ এই ঘোড়াগুলোকে ‘টাখি’ নামে ডাকলেও বাকি দুনিয়ার কাছে এরা পরিচিত প্রজেওয়ালস্কির ঘোড়া নামে। জিনগত দিক থেকে এরা সাধারণ ঘোড়ার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন (তাদের ক্রোমোজোম সংখ্যাও বেশি)।
রোমান্টিকেরা বলেন, এটাই পৃথিবীর শেষ সত্যিকারের ‘বুনো’ ঘোড়া। কারণ টাখি কখনোই পোষ মানেনি। এমনকি আমেরিকার মুক্তাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানো মাসট্যাং ঘোড়ারাও একসময় মানুষের পোষ মেনেছিল।
পশ্চিমা দুনিয়ার ঘোড়াপ্রেমীরা এই প্রাণীর কথা জানতে পারেন ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে, যখন রুশ অভিযাত্রী নিকোলাই প্রজেওয়ালস্কি জীবন্ত প্রমাণ নিয়ে ফিরে যান। এরপর শুরু হয় এই প্রজাতির ঘোড়া শিকারের এক ভয়ানক যুগ। বিদেশিদের চাহিদা মেটাতে মঙ্গোলিয়ান শিকারিরা প্রায় সময়ই বাবা-মাকে হত্যা করে বাচ্চা ঘোড়াগুলোকে ধরে নিয়ে যেতেন। এ ছাড়া আবাসস্থলের ক্ষতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় প্রাকৃতিক পরিবেশে টাখির সংখ্যা দ্রুত কমে আসে। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে বুনো পরিবেশে আর কোনো টাখি অবশিষ্ট ছিল না।
এই বিপর্যয়ের পর বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণবাদীরা বিভিন্ন পরিবেশে বন্দী অবস্থায় থাকা টাখিদের প্রজননে মন দেন। এদের সংখ্যা এক সময় মাত্র ৩০-এ নেমে এসেছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আজ প্রজেওয়ালস্কির ঘোড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই হাজারে। সংখ্যাটি বিশাল নয়, কিন্তু নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক—কারণ তারা ধ্বংসের একেবারে কিনারায় ছিল।
এখন এই ঘোড়াগুলোকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাদের পুরোনো আবাসে। মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটর থেকে বেশি দূরে নয় হুস্তাই ন্যাশনাল পার্ক। পার্কটির পরিচালক দাশপুরেভ ছেরেন্দেলেগ জানিয়েছেন, বর্তমানে সেখানে প্রায় ৩৫০টি টাখি ঘোড়া রয়েছে। বিশ্বে এক জায়গায় এত বেশি টাখি আর কোথাও নেই। মঙ্গোলিয়ায় আরও দুটি সংরক্ষণকেন্দ্র মিলিয়ে এখন প্রায় ৮০০টি টাখি রয়েছে।
তবে শুধু মঙ্গোলিয়াতেই নয়—ইউরোপের চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া ছয়টি টাখি সম্প্রতি কাজাখস্তানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চীনেও এদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। তবু মঙ্গোলিয়ানদের জন্য এই কাজটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হুস্তাই পার্কের উদ্ভিদবিদ গেগি আজারগাল বলেন, ‘টাখিকে রক্ষা করা মানে আমাদের পরিচয়কে রক্ষা করা।’