শিরোনাম

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ‘স্বর্ণপদক’ জিতল গুগলের এআই

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ‘স্বর্ণপদক’ জিতল গুগলের এআই

অস্ট্রেলিয়ায় চলতি মাসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) প্রশ্ন মানুষের মতো সমাধান করে ‘স্বর্ণপদকের মান’ (গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড) অর্জন করেছে গুগল ডিপমাইন্ডের তৈরি একটি চ্যাটবট এআই সিস্টেম। ছয়টি সমস্যার মধ্যে পাঁচটির সমাধান করে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রথমবারের মতো এমন উচ্চস্তরের পারফরম্যান্স দেখাতে সক্ষম হয়েছে বলে গত সোমবার এক ব্লগপোস্টে জানিয়েছে গুগল।

গুগল জানায়, এআই সিস্টেমটি কোনো রকম মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাভাবিক ইংরেজি ভাষায় প্রশ্ন পড়ে এবং সেগুলোর উত্তর দেয়। তবে এটাই প্রথমবার, যখন কোনো যন্ত্র গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন এমনভাবে সমাধান করল, যা মানুষই সাধারণত করে থাকে।

এই সাফল্য এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন প্রযুক্তি ভবিষ্যতে গণিত, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং গবেষণাকে ত্বরান্বিত করবে এবং অভিজ্ঞ প্রোগ্রামারদের কাজকে সহজ করে তুলবে।

এর ঠিক দুই দিন আগে ওপেনএআই-এর একজন গবেষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তাদের তৈরি আরেকটি এআই সিস্টেম এবারের আইএমও–এর প্রশ্নে একই ধরনের স্কোর করেছে, যদিও সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি।

উল্লেখ্য, আগে যেসব এআই সিস্টেম আইএমও-তে অংশ নিয়েছে, সেগুলো শুধুমাত্র তখনই উত্তর দিতে পারত, যখন প্রশ্নগুলোকে গণিতসমাধানের জন্য তৈরি বিশেষ প্রোগ্রামিং ভাষায় রূপান্তর করা হতো। তবে এবারের গুগলের চ্যাটবট সিস্টেম ইংরেজিতে লেখা প্রশ্ন নিজেই পড়ে বুঝে উত্তর দিয়েছে।

গুগল ডিপমাইন্ডের সিনিয়র স্টাফ গবেষক থাং লুওং বলেন, ‘আমরা এই সমস্যাগুলো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাষায় সমাধান করেছি। এর মানে, এখানে কোনো মানব হস্তক্ষেপ ছিল না—একেবারেই না।’

২০২২ সালের শেষ দিকে ওপেনএআই যখন চ্যাটজিপিটি প্রকাশ করে, তখন থেকেই এআই খাতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যাটবটগুলো কবিতা লিখতে, খবর সংক্ষেপ করতে বা কোড লিখতে পারলেও জটিল গণিত সমস্যায় তারা পিছিয়ে ছিল। গত দুই বছরে গুগল ও ওপেনএআই গণিত উপযোগী আরও শক্তিশালী এআই সিস্টেম তৈরি করেছে।

২০২৪ সালে গুগল ডিপমাইন্ড গণিতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি দুটি সিস্টেম উন্মোচন করে—আলফাজিওমেট্রি ও আলফাপ্রুফ। সেবার আইএমও-তে অংশ নিয়ে চারটি সমস্যা সমাধান করে তারা রৌপ্যপদকের সমতুল্য স্কোর করে, যা ছিল কোনো যন্ত্রের জন্য প্রথমবারের মতো এমন সাফল্য।

তবে আলফাপ্রুফ ও হরমোনিকের মতো সিস্টেম কোনো চ্যাটবট ছিল না। সেগুলোর জন্য প্রশ্নগুলোকে প্রথমে ‘Lean’ প্রোগ্রামিং ভাষায় অনুবাদ করতে হতো।

এবার গুগল যে চ্যাটবট সিস্টেমটি তৈরি করেছে, তার নাম ‘জেমিনি ডিপ থিংক’। এটি এখনো সাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। এটি একটি ‘রিজনিং সিস্টেম’ বা যুক্তিভিত্তিক এআই, যা গণিত, বিজ্ঞান ও প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত জটিল সমস্যাগুলো ধাপে ধাপে চিন্তা করে সমাধান করতে পারে।

গুগল জানিয়েছে, জেমিনি ডিপ থিংক পরীক্ষার জন্য মানব অংশগ্রহণকারীদের মতোই ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় নিয়েছে। তবে ঠিক কত অর্থ, প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বা বিদ্যুৎ ব্যয় হয়েছে—সে বিষয়ে গুগল কিছু জানায়নি।

রিজনিং সিস্টেমগুলো সাধারণত বিশাল পরিমাণ ইন্টারনেট পাঠ্য বিশ্লেষণ করে শেখে এবং এরপর পরীক্ষার মাধ্যমে আরও দক্ষতা অর্জন করে। তবে এ ধরনের এআই সিস্টেম চালাতে ব্যয় অনেক বেশি হয়, কারণ এটি দ্রুত নয়, বরং চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে উত্তর দেয়।

বর্তমানে ওপেনএআই, অ্যানথ্রোপিক ও চীনের ডিপসিকসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানও একই ধরনের রিজনিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ‘ARC-AGI’ নামের এক যুক্তিভিত্তিক পরীক্ষায় মানুষের চেয়েও ভালো ফল করেছিল ওপেনএআই-এর একটি সিস্টেম। তবে প্রতিযোগিতার শর্ত অনুযায়ী, এটি তখন নিয়ম লঙ্ঘন করে, কারণ পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে তাদের প্রায় ১৫ লাখ ডলার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ও কম্পিউটিং খরচ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই যদি এভাবে মানুষের মতো করে স্বাভাবিক ভাষায় জটিল সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়। তবে আগামী দিনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রভাব হবে বিপুল।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button