অনলাইনে পর্নো দেখতে সেলফি দেওয়া বাধ্যতামূলক করল যুক্তরাজ্য


যুক্তরাজ্যে পর্নোগ্রাফি দেখতে হলে এখন থেকে বয়স যাচাইয়ের জন্য সেলফি কিংবা ছবিসহ আইডি কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) থেকে কার্যকর হওয়া সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পর্নো কনটেন্ট প্রকাশ বা প্রদর্শনকারী যেকোনো ওয়েবসাইটকে ‘ব্যাপকভাবে কার্যকর’ বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
ব্রিটেনের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম জানিয়েছে, ওয়েবসাইটগুলোকে বয়স যাচাইয়ের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ক্রেডিট কার্ড যাচাই, ছবি আইডি মিলিয়ে দেখা কিংবা ব্যবহারকারীর দেওয়া সেলফির মাধ্যমে তার আনুমানিক বয়স নির্ধারণ করা।
এরই মধ্যে ব্রিটেনের সর্বাধিক ভিজিট করা পর্নো সাইট ‘পর্নোহাব’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পর্নো সাইট এই নিয়ম মেনে চলার সম্মতি দিয়েছে। শুধু পর্নো সাইটই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেমন রেডিট ও ব্লুস্কাই ইতিমধ্যে নতুন নিয়ম অনুযায়ী বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু করেছে।
তবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ এরই মধ্যে এই ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। কেউ ব্যবহার করছেন ভিপিএন, কেউ আবার চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে বানানো ভুয়া ছবি আইডি বা ভিডিও গেম চরিত্রের উচ্চমানের সেলফি।
অবশ্য এসব ফাঁকি রোধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বয়স যাচাই এড়াতে সাহায্য করে এমন ভিপিএন প্রচারও এখন থেকে অবৈধ।
এই আইন যেন কার্যকর হয়, তা নিশ্চিত করতে অফকম জানিয়েছে, নিয়ম ভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড বা কোম্পানির বৈশ্বিক আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
নতুন আইনের আওতায় যুক্তরাজ্যে লক্ষাধিক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে এখন পর্নোগ্রাফি দেখতে হলে বয়স ১৮ বছরের বেশি প্রমাণ করতে হবে। আগে শুধু ‘আমি প্রাপ্তবয়স্ক’ চেকবক্সে টিক দিলেই চলত, এখন তা বাতিল করে সেলফিভিত্তিক বয়স নির্ধারণ, আইডি ডকুমেন্ট আপলোড, ক্রেডিট কার্ড যাচাইসহ আরও কড়া যাচাই পদ্ধতি চালু হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এসব পদ্ধতির ফলে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি, সরকারি নজরদারি ও ডেটা ব্রিচের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
স্ট্যানফোর্ডের গবেষক রিয়ানা ফেফারকর্ন বলেছেন, ‘এই প্রযুক্তি মানুষের গোপনে তথ্য অনুসন্ধানের স্বাধীনতায় বাধা দেয়।’
ফ্রি স্পিচ কোয়ালিশন বলেছে, ‘এই ব্যবস্থা কার্যকর না হয়ে উল্টো মানুষকে ভুয়া ও অবৈধ সাইটের দিকে ঠেলে দেয়।’
আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিসা গিভেন সতর্ক করেছেন, ‘এই আইন মানুষকে ভুয়া নিরাপত্তা অনুভূতি দিতে পারে, বাস্তবে যা শিশুদের সুরক্ষা দেয় না।’
তথ্যসূত্র: ইএনগেজেট ও ওয়্যারড