বরিশালে মশার রাজত্ব! ওষুধে মরছে তেলাপোকা


ক্রাইম জোন ২৪।। বরিশালে ঈদের আগে মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নগরীর প্রায় সব এলাকায় মশার উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে, দিন হোক বা রাত—মশার কামড়ে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। অথচ সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর দাবি করলেও বাস্তবে তা কোনো কাজেই আসছে না। বরং স্থানীয়দের অভিযোগ, করপোরেশনের দেওয়া ওষুধে তেলাপোকা মরলেও মশার দাপট আরও বেড়ে গেছে!
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আগের চেয়ে অনেক বেশি ফগার মেশিন ও স্প্রে ব্যবহার করা হলেও মশা নিধনে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। বরং মশা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঈদ সামনে রেখে বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনও মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তারা প্রতিদিন নির্ধারিত ওয়ার্ডগুলোতে মশা নিধনের জন্য ফগিং এবং লার্ভিসাইড প্রয়োগ করছেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, ওষুধের মান এতটাই নিম্নমানের যে তা কার্যকর হচ্ছে না।
সিটি করপোরেশনের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা ওষুধ ছিটাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এই ওষুধ কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
বরিশালের চকবাজার, বগুড়া রোড, কাশিপুর, বান্দ রোড, কাউনিয়া, নথুল্লাবাদসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ওষুধ প্রয়োগের পরও মশার উপদ্রব একটুও কমেনি। বরং সন্ধ্যার পর মশার দল যেন আক্রমণ চালায়!
স্থানীয় বাসিন্দা হোসাইন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে অন্তত রাতের বেলা কয়েল দিলে একটু রেহাই পাওয়া যেত। এখন কয়েল, স্প্রে, কিছুতেই কাজ হয় না। সিটি করপোরেশন তো বলছে ওষুধ দিচ্ছে, কিন্তু সেই ওষুধে তেলাপোকা মরলেও মশা আরও বেড়ে গেছে!’
ঈদকে সামনে রেখে বরিশালের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু মশার উৎপাতের কারণে অনেকেই স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারছেন না। বরিশাল নিউ মার্কেটে আসা একজন ক্রেতা বলেন, ‘পোশাক কিনতে এসেছিলাম, কিন্তু মশার কামড়ে টিকতে পারছি না। সিটি করপোরেশন কী করছে বুঝতে পারছি না।’
মশার উপদ্রব বাড়ার ফলে ডেঙ্গুর আশঙ্কাও বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরিশালে গত দুই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯০ জন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বর্ষার আগে আরও বড় ধরনের ডেঙ্গু প্রকোপ দেখা দিতে পারে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বরিশালের খালগুলো পরিষ্কার না করলে, জলাবদ্ধতা দূর না করলে মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যাবে না। পাশাপাশি, কার্যকর ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
নগরবাসীর একটাই দাবি—ঈদের আগে যেন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে মশার উপদ্রব কমানো হয়, নইলে বরিশালে উৎসবের আনন্দ ফিকে হয়ে যেতে পারে।