বরিশালে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম অদৃশ্য!


ক্রাইম জোন ২৪।। বরিশালের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলেও বাজার মনিটরিংয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সাধারণ ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ জানানো হলেও তা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেবুর দাম হালি প্রতি ৩০-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হয়েছে। বেগুন ৩০-৩৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা, শসা ১৫-২০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭০-১৯০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০-২১০ টাকা, সোনালি মুরগির দাম ২৬০-২৯০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০-৩১০ টাকা হয়েছে। গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, ছোলার দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে, চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি, মুড়ি ১১০-১৪০ টাকা কেজি। খেজুরের দাম জাতভেদে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। জায়েদি খেজুর ২২০০ টাকা, মেডজুল ১৬০০-১৭০০ টাকা, মরিয়ম ১১০০-১৩০০ টাকা, মাবরুম ৮০০-১২০০ টাকা, শুক্কার ৯০০ টাকা, কামরাঙা মরিয়ম ১০০০ টাকা এবং আজওয়া খেজুর ১৬০০-১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়লেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের কিছুই করার নেই। তবে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।
নগরীর বাংলাবাজার এলাকার দিনমজুর সবুজ হাওলাদার বলেন, “রমজানের আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে রেখেছেন। আমাদের মতো দিনমজুরদের পক্ষে এই দামে বাজার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
সাগরদী চান্দুর মার্কেট এলাকার রিকশাচালক মিলন বলেন, “আগে যেখানে ১০০ টাকায় কয়েক ধরনের সবজি কেনা যেত, এখন সেই টাকায় এক কেজি সবজি কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন, অথচ প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই।”
বাজারে নৈরাজ্যের মধ্যেই বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রেতারা বলছেন, তারা অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নগরীর বাসিন্দা মনির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “আমি অনলাইনে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তারা শুধু অভিযোগ গ্রহণের নম্বর পাঠিয়েছে, কিন্তু পরে কোনো তদন্ত বা অভিযান চালায়নি। ফোন করলেও তারা রিসিভ করে না।”
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, “রমজান উপলক্ষে বাজার মনিটরিং অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা তারা বাজারে দেখতে পাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা যেভাবে খুশি সেভাবেই দাম বাড়াচ্ছেন, আর প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে দ্রুত কার্যকর বাজার মনিটরিং ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার দাবি উঠেছে। বাজারের নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন ক্রাইম জোন ২৪।