সড়ক নয় যেন গর্তের ফাঁদ, আদিতমারীতে ভোগান্তির শেষ নেই


লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে মহিষখোঁচা থেকে বুড়ির বাজার পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। এটি আদিতমারী উপজেলার অর্থনৈতিক কেন্দ্র মহিষখোঁচাকে লালমনিরহাট–বুড়িমারী মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
মহিষখোঁচা ইউনিয়নে রয়েছে একাধিক ব্যাংক-বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উপজেলার একমাত্র কামিল মাদ্রাসা। এখানকার কুষ্টারীর হাট থেকে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের বার্ষিক হাটবাজার আয় আসে বড় অংশেই। গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের একমাত্র সংযোগ পথটিই এখন চলাচলের অনুপযোগী।
সড়কটির অসংখ্য খানাখন্দে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। পথচারীরা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন, যানবাহন বিকল হচ্ছে এবং বড় যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি রিকশা, ভ্যান কিংবা অটোরিকশাও এখন কষ্টসাধ্যভাবে চলছে। ফলে অতিরিক্ত ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য শাহীন বলেন, ‘ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ করছি। সড়ক খারাপ থাকায় ট্রাকে মাল আনা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে মাল আনতে হচ্ছে।’
মহিষখোঁচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানে আসছে। এ সড়ক দ্রুত সংস্কার করা উচিত।’
স্কুল শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেন, ‘প্রতিদিন অটোরিকশায় স্কুলে যাই। এখন অটোতে উঠলেই বুক ধড়ফড় করে। মনে হয়, কখন গর্তে পড়ে উল্টে যাবে। এ রাস্তা দেখে মনে হয়, পুকুর।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, ‘সড়কটির কারণে কোনো দিনই ঠিকমতো অফিসে পৌঁছাতে পারি না। দুই দিন মোটরসাইকেল উল্টে পড়েছি।’
এ উপজেলার শুধু মহিষখোঁচা-বুড়িরবাজার সড়কই নয়, আরও কয়েকটি বাইপাস সড়কের অবস্থা ভয়াবহ।
দুরাকুটি থেকে বামনের বাসা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, সাপ্টিবাড়ী থেকে নাড়িয়ার বাজার ৬ কিলোমিটার, কালীস্থান থেকে কমলাবাড়ী ১.৫ কিলোমিটার—সবগুলোরই সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, সড়ক মেরামতে সরকারি বরাদ্দ খুবই সীমিত। আপাতত মহিষখোঁচা-বুড়ির বাজার ৪.৫ কিলোমিটার এবং ভেলাবাড়ী–বামনের বাসা সাত কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে মোট ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার দুটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘বেশ কয়েকটি সড়ক দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। জরুরি ভিত্তিতে দুটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।’