শিরোনাম
স্বামীর বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতাআইসিসির দ্বিস্তরী কাঠামো নিয়ে ইংল্যান্ডের দুশ্চিন্তামেজর সাদিকের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ, ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবেইনস্টাগ্রামে রিপোস্ট সুবিধাসহ যুক্ত হলো নতুন তিন ফিচারএক বছরেও সন্ধান মেলেনি শাহে আলমের, অসহায় পরিবারনিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিতে নামবে জিম্বাবুয়ে, খেলা দেখবেন কোথায়উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা, সচিবালয়ে কঠোর নিরাপত্তাবাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় কলকাতায় স্টেডিয়ামে প্রতিবাদী ব্যানার টাঙাল ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরাযেসব আমলে সংসারে শান্তি আসেট্রাম্পের চাপে যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে অ্যাপল

বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন ইতালির, ব্যয় হবে ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার

বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন ইতালির, ব্যয় হবে ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার

ইতালির সিসিলি দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের ক্যালাব্রিয়া অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করতে বিশ্বের দীর্ঘতম সাসপেনশন ব্রিজ নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে রোম। নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি, স্থানীয় মাফিয়াদের হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কায় বহুবছর ধরে অনিশ্চয়তায় ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরোর (১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এই ‘মেসিনা ব্রিজ’ প্রকল্পটি।

প্রকল্প অনুযায়ী, মেসিনা প্রণালির ওপর নির্মিতব্য এই সেতু হবে ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর দুই প্রান্তে থাকবে ৪০০ মিটার উচ্চতার দুটি টাওয়ার। সেতুর মধ্য দিয়ে যাবে দুটি রেললাইন, আর উভয় পাশে থাকবে তিনটি করে মোট ছয়টি যানবাহন চলাচলের লেন। নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৩২-২০৩৩ সালের মধ্যে।

এটি ভূমধ্যসাগরের অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল। তবে, সেতুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পও সহ্য করতে পারবে বলে দাবি করছেন প্রকৌশলীরা। সামরিক খাতের ব্যয় হিসেবে বিবেচনায় এনে সেতুটিকে ন্যাটোর জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায় রোম।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘এই প্রকল্প সহজ ছিল না, তবে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি যদি তা যৌক্তিক হয়। এটি ইতালির বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ।’

ডানপন্থী লেগা দলের নেতা এবং সরকারের জোটসঙ্গী পরিবহনমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি একে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর দাবি, সেতু নির্মাণে প্রতিবছর ১ লাখ ২০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়া অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে। এই দুই অঞ্চল ইউরোপের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম।

তবে এখনো চূড়ান্ত বাস্তবায়নের আগে রয়েছে একাধিক প্রশাসনিক ধাপ। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য যেতে হবে ইতালির ‘কোর্ট অব অডিটরস’-এ এবং পরিবেশ বিষয়ক জাতীয় ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্থাগুলোর সঙ্গেও সমন্বয় করতে হবে। পাশাপাশি প্রণালির দুই পাশে বসবাসকারী যেসব বাসিন্দার জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়বে, তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ এবং আইনি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে হবে। এসব কারণে প্রকল্পে বিলম্ব কিংবা স্থবিরতা দেখা দিতে পারে।

এর আগে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সরকার মেসিনা ব্রিজ প্রকল্প হাতে নিলেও শেষপর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ব্যয়ের পরিমাণ, পরিবেশগত ঝুঁকি, নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ ইতালিতে সক্রিয় সিসিলিয়ান ও ক্যালাব্রিয়ান মাফিয়ার হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় বারবার তা স্থগিত হয়েছে এই প্রকল্প।

এদিকে, সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধিতা আরও জোরালো হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডি) সিনেটর নিকোলা ইর্তো একে ‘বিতর্কিত ও বিভাজনমূলক’ প্রকল্প বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পরিবহন, অবকাঠামো, নিরাপদ শিক্ষা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার খাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ সরিয়ে নিচ্ছে এই প্রকল্প।’ ক্যালাব্রিয়ার উপকূলীয় শহর ভিলা সান জিওভান্নির মেয়র জিউসি কামিনিতি বলেন, তাঁর শহর প্রকল্পের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ ছাড়া, ব্রিজ-বিরোধী স্থানীয় কমিটি ‘নো টু দ্য ব্রিজ’ এই ঘোষণাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তাঁদের দাবি, কোনো প্রযুক্তিগত বা পরিবেশগত মূল্যায়নের ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটাতেই সিদ্ধান্ত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কারণে সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়ার খরা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে আশঙ্কা করছে তারা। তাদের ভাষ্য—এমনিতেই এই দুই অঞ্চলে প্রতিবছরই খরা দেখা যায়, এখন এই প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হবে বিপুল পরিমাণ পানি। যা খরা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে।

তবে, আছে মুদ্রার উল্টো পিঠও। অনেকেই ব্রিজ নির্মাণের পক্ষে। তাদের ভাষ্য—বর্তমানে ট্রেন পারাপারের একমাত্র উপায় হলো ফেরি। পুরো ট্রেনকে আলাদা করে ফেরিতে তুলে প্রণালি পার করতে হয়, যা গড়ে ৩০ মিনিট সময় নেয়। ব্রিজ নির্মিত হলে এই সময় ও শ্রমসাধ্য যাত্রার অবসান ঘটবে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button