কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির


কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমানের (৪৫) বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী প্রতিষ্ঠানটির বাবুর্চি (২৮) এক যুবক। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাসের (৪২) বিরুদ্ধে মামলায় নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের হারুন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের বিচারক মাহমুদুল ইসলাম অভিযোগটি আমলে নিয়ে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২১ জুলাই কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর আমলি আদালতে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে ডরমিটরির দ্বিতীয় তলায় খাবার দিতে যান ওই যুবক। টেবিলে খাবার রাখার পর শরীর ব্যথা করছে বলে তাঁকে ম্যাসাজ করে দিতে বলেন উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান। শরীর ম্যাসাজের একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা জোরপূর্বক তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করেন। এ ছাড়া ডান হাতের কবজির ওপর কামড়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এ সময় ভুক্তভোগী কান্নাকাটি শুরু করলে তাঁকে বলা হয়, বিষয়টি কারও কাছে বললে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে এবং প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আনা হয় নির্যাতনের অভিযোগ। ভুক্তভোগী বলেন, উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাস অনেক আগে থেকে তাঁকে কয়েকবার মারধর করেন। বাবুর্চি বলেন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লোহা আগুনে পুড়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। এতে তিনি মারাত্মক জখম হন। পরে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে ঠান্ডা পানি ও ডিম ভেঙে লাগিয়ে ব্যথা ও জ্বালা কমানোর চেষ্টা করেন বিপ্লব। পরে এ ঘটনার চার দিন পরে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী।
তদন্ত প্রতিবেদনের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কিশোরগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান। এদিকে হর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বিশ্বাসের দাবি, ওই বাবুর্চিকে জনস্বার্থে বদলির আদেশের পরেই তাঁদের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের হারুন বলেন, বাদীকে দীর্ঘদিন ধরে পৈশাচিক নির্যাতনের অভিযোগে যে মামলা করা হয়েছে, সেটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডও হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম মামলার বিষয়টি অবগত আছেন উল্লেখ করে জানান, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।