লজ্জাশীলতা—মুমিনের অলংকার


লজ্জা বা হায়া ইসলামের একটি মৌলিক গুণ, যা মুমিনের চরিত্রকে সুশোভিত করে। এর কারণে মানুষের মধ্য থেকে কুটিলতা ও পাপ দূর হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা নিজেও এ গুণে গুণান্বিত, তাই তিনি লজ্জাশীল বান্দাকে পছন্দ করেন। এটি কেবল বাহ্যিক শালীনতা নয়, বরং অন্তরের পবিত্রতা ও আল্লাহভীতির প্রকাশ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ইমানের অঙ্গ।’ এই গুণটি ব্যক্তিকে পাপ থেকে রক্ষা করে, সমাজে শান্তি ও সম্মান বজায় রাখে। লজ্জাশীলতা ইসলামের স্বভাব, যা নবী-রাসুলদের চরিত্রেও বিদ্যমান ছিল।
লজ্জা আরবিতে ‘হায়া’ নামে পরিচিত, যার অর্থ মানব চরিত্রের এমন একটি গুণ যা তাকে কোনো অশ্লীল কথা বা খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
হাদিসে এসেছে, ‘প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ চরিত্র আছে; ইসলামের চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের ৭০ টিরও বেশি শাখা আছে; সর্বোচ্চ হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। লজ্জাও ইমানের একটি শাখা।’
লজ্জাশীল ব্যক্তির জন্য জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে। নবী (সা.) বলেন, ‘যে লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দেবেন।’
ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জাশীলতা পুরোটাই কল্যাণকর।’ (সহিহ্ মুসলিম)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) নিজ গৃহে অবস্থানকারিণী কুমারী মেয়ের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন।’ (সহিহ্ বুখারি)
লজ্জাহীনতা ইমানের দুর্বলতা ও সমাজে অশান্তির কারণ। রাসুল (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘যখন লজ্জা চলে যায়, তখন মানুষ যা ইচ্ছা তাই করে।’
বর্তমানে যুবসমাজের চলাফেরা, আচরণ ও অশ্লীলতায় লজ্জাহীনতার প্রকাশ ঘটছে, যা তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নারী-পুরুষ উভয়েরই উচিত—শরিয়তের পর্দা মেনে চলা। অপ্রয়োজনে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মেলামেশা, অশালীন আচরণ ও কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।
সর্বদা এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ আমাদের দেখছেন, যা লজ্জা বাড়াতে সাহায্য করে। লজ্জা মুমিনের অলংকার, যা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করে। এটি ইমানের অংশ এবং সমাজের শান্তির চাবিকাঠি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রাজবাড়ী