শিরোনাম
জুলাই সনদে ৫ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধান উপদেষ্টাকে যৌথ চিঠিমাদক সেবনে নিষেধ করায় ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পিটুনিআক্কেলপুরে পুলিশের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিহতরোমাঞ্চ জমে উঠেছে ওভালে, বৃষ্টিতে বন্ধ খেলাপ্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি আর চায় না জনগণ: তারেক রহমানইবি শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ, উচ্চতর তদন্তের সুপারিশখুলনায় যুবককে গলা কেটে হত্যাজুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ মানিক মিয়ায়, জমায়েতে সরকারের ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেনআল-আকসা মসজিদে নিয়ম ভাঙলেন বেন-গভির, সৌদি আরবের সতর্কতাকারখানার ওয়াশিং মেশিনের গরম পানিতে পড়ে ২ শ্রমিক দগ্ধ

বাংলাদেশির মামলায় ধাক্কা খেল ইউরোপের আশ্রয়প্রার্থী ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা

বাংলাদেশির মামলায় ধাক্কা খেল ইউরোপের আশ্রয়প্রার্থী ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা

ইতালির বিতর্কিত উদ্যোগকে অনুসরণ করে সমুদ্রপথে উদ্ধার হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের বিদেশের ডিপোর্টেশন সেন্টারে পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। তবে ইউরোপীয় শীর্ষ আদালতের (ইসিজি) এক রায়ে সেই পরিকল্পনায় বড়সড় ধাক্কা লাগল। যে মামলার সূত্র ধরে এই রায় এসেছে সেটি করেছিলেন দুই বাংলাদেশি। তাঁরা আলবেনিয়ায় অবস্থিত ইতালির আটককেন্দ্রে ছিলেন।

ইসিজি-এর ওই রায়ে বলা হয়েছে—ইতালি তার পরিচালিত আলবেনিয়ার শেঙ্গিন শহর ও গ্যাদারের কেন্দ্রগুলো চালিয়ে যেতে পারলেও—সেখানে কাদের পাঠানো যাবে, তা আরও কঠোরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেষ করে, নিশ্চিত করতে হবে, কাউকে যেন এমন কোনো দেশে ফেরত না পাঠানো হয়, যেখানে তাঁর জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

আদালত রায়ে স্পষ্ট করেছে, কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে ঘোষণা করার আগে সেটিকে কার্যকর বিচারিক পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে সেই দেশটি তার সমস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য—বিশেষ করে প্রান্তিক ও দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য বাসযোগ্য এবং নিরাপদ কি না, তাও নিরীক্ষণ করতে হবে।

রোববার সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায়টি ২০২৬ সালের জুনে কার্যকর হতে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন নীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নিজেরাই নিরাপদ দেশের তালিকা তৈরি করে দ্রুত আশ্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেসব নিরাপদ দেশের তালিকা দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ, ভারত, মিশর, তিউনিসিয়া, কসোভো, কলম্বিয়া ও মরক্কোর নাম রয়েছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই সতর্ক করেছে যে—এই দেশগুলো সবার জন্য নিরাপদ নয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত জুলাইয়ে বলেছে, ‘যে দেশগুলো থেকে ২০ শতাংশ বা তার কম আবেদনকারী আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পান, তাদের নিরাপদ ঘোষণা করা হলেও—তথ্য বলছে, এখনো শতকরা ২০ ভাগ আবেদনকারী প্রকৃতপক্ষে শরণার্থীর মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। অর্থাৎ দেশগুলো আসলে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না।’

ইসিজে-এর রায়টি মূলত দুজন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। তাঁরা আলবেনিয়ার আটককেন্দ্রে ছিলেন এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান।

আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ার অবস্থিত আটককেন্দ্রে পাঠাতে ইতালির চুক্তিকে ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশ সফল মডেল হিসেবে বিবেচনা করছিল। মূলত আলবেনিয়ায় ওই কেন্দ্রগুলো ইতালির সরকারই নিজ খরচে তৈরি করেছিল। এসব বহিষ্কার কেন্দ্র এবং ‘রিটার্ন হাব’ নির্মাণে ইতিমধ্যে দেশটির ৭৪.২ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব বারি এক গবেষণায় এটিকে ইতালির ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল, অমানবিক ও ব্যর্থ অভিবাসন পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

তারপরও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এবং তৎকালীন ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল ২০২৩ সালে ইতালির ওই চুক্তিকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। এমনকি ২০২৪ সালের মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন কিছু সংস্কার গ্রহণ করে, যার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের বোঝা ভাগাভাগি করা এবং ‘নিরাপদ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা দেশ থেকে আগতদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

ইসিজে-এর রায় এই কেন্দ্রগুলো গড়ে তোলার পরিকল্পনায় কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইতালির কট্টর-ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আদালতের এই রায়কে ‘অদূরদর্শী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এই রায় অবৈধ অভিবাসন রোধ ও জাতীয় সীমানা রক্ষার নীতিকে দুর্বল করে। এটি এমন এক পরিবর্তন, যা সকলের জন্য উদ্বেগের—বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা আজ এই রায়ে আনন্দিত হচ্ছেন।’

সিএনএন-এর তথ্য অনুযায়ী, ইতালির আলবেনিয়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে মিশর ও বাংলাদেশের অন্তত এক ডজন মানুষের ভাগ্য এখন ঝুলে রয়েছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button