বর্ষায় নীড়হারা চবির পাখিরা


পাহাড়ি সবুজ অরণ্যে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ভোরবেলায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচিরে। ডুবুরি, ছোট শরালি, ছোট হরিয়াল, পাপিয়া, কানাকুকা, মালকোহা, পানকৌড়ি, সোনালি বাটান, নীলকান্ত, ফটিকজল, বড় হালতিসহ অসংখ্য পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে পুরো ক্যাম্পাস। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মাঠ, ফরেস্ট্রি এলাকা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দক্ষিণ ক্যাম্পাস আর ঝরনাপাড়—সব জায়গা মুখর থাকে পাখির কোলাহলে। এখানে বাস করে ২৩১ প্রজাতির পাখি। কিন্তু বর্ষার প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় এই প্রাণবন্ত অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে অনিরাপদ।
সেদিন সকালে ক্যাম্পাসে হাঁটতে গিয়ে দেখি, একটি ছোট্ট বাবুই পাখি ছিন্নভিন্ন বাসার সামনে নির্বাক বসে আছে। রাতের মুষলধারে বৃষ্টি হয়তো তার সামান্য অবলম্বনটুকুও কেড়ে নিয়েছে। বর্ষা ক্যাম্পাসে সবুজের আহ্বান বয়ে আনলেও পাখিদের কাছে সেটা এক কঠিন বাস্তবতা। প্রতিদিন বৃষ্টিতে ভিজে যায় তাদের বাসা, ভারী হয়ে পড়ে পালক, কাঁপে ডানা। খাবারও মেলে না সেভাবে। প্রকৃতির এই বৈরিতা দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়, আমাদের অলস সকালে খুব একটা প্রশ্ন তোলে না। অথচ একটু সহানুভূতিই হতে পারে এই নিরীহ প্রাণগুলোর পাশে দাঁড়ানোর পথ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে পাখিদের নীড় ভেঙে যায়, ডানা ভিজে অসহায় হয়ে পড়ে। এ সময় আমাদের উচিত ছাতা শুধু নিজের জন্য নয়, ওদের জন্যও খোলা। গাছের ডালে নিরাপদ আশ্রয় বানানো, খাদ্য-পানির ব্যবস্থা করা এবং ওদের বিরক্ত না করাই হতে পারে বড় সহায়তা।’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা টিনার কথায়, ‘প্রকৃতি বর্ষায় শান্ত হলেও পাখিদের জন্য তা রূপ নেয় দুর্যোগে। আশ্রয় হারায়, খাবার পায় না। আমরা যদি ছাদে কিংবা বারান্দায় শুকনা জায়গায় ওদের জন্য অস্থায়ী বাসা তৈরি করে দিই, সঙ্গে রাখি কিছু খাদ্য আর পানি—তাহলে অন্তত
এই সময়টা তাদের কিছুটা সহনীয় হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. ইকরাম আনসার তুহিন বলেন, বর্ষাকালে পাখিদের প্রধান আশ্রয় হলো গাছপালা। সেগুলো এ সময় ভেঙে পড়ে, অনেক সময় গাছ উপড়ে যায়। এতে ডিম বা ছানারা ঝুঁকিতে পড়ে। ভারী বৃষ্টিতে ওড়ার ক্ষমতা কমে যায়, বিশেষ করে ছোট পাখিদের পালক ভিজে যায় বলে ওড়াও কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ ছাড়া এ সময় প্রজননের মৌসুমও চলতে থাকে, যা বৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়।
পাখিরাও আমাদের এই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা। তারা গান গেয়ে সকাল এনে দেয়, সন্ধ্যায় ক্লান্তি ঘোচায়। বর্ষার দুর্যোগে তারা যেন একা না থাকে—সেই মানবিকতার দায় আমাদেরই। এই বাস্তবতায় তিনি কৃত্রিম আশ্রয় তৈরি, খাদ্য মজুত এবং পরিবেশবান্ধব বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।