এআইতে রেকর্ড বিনিয়োগ, ৬ মাসেই ১৫৫ বিলিয়ন ডলার ঢালল যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্টরা


চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নে রেকর্ড ১৫৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২৫ সালের যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সেবা খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের চেয়েও বেশি এই ব্যয়।
সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ চার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা, মাইক্রোসফট, আমাজন ও গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো এআই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে মূলধন ব্যয় করছে।
মূলধন ব্যয় বলতে বোঝায়, যেসব অর্থ কোম্পানিগুলো স্থায়ী সম্পদ যেমন—ডেটা সেন্টার, সার্ভার ও অত্যাধুনিক চিপ কিনতে বা উন্নয়নে ব্যয় করে। এই অবকাঠামোগুলোর মাধ্যমেই মূলত এআই প্রযুক্তি পরিচালিত হয়। গুগল তাদের সাম্প্রতিক আয় প্রতিবেদনে বলেছে, ‘আমাদের মূলধন ব্যয়ের বেশির ভাগই এআই সমর্থিত সার্ভার ও ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ করেছি।’
মেটা জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তারা এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০ কোটি ডলার খরচ করেছে, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ (১ হাজার ৫২০ কোটি ডলার)। শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিকেই প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে, যেখানে গত বছর একই সময়ে খরচ ছিল ৮৫০ কোটি ডলার।
অন্যদিকে, অ্যালফাবেট প্রথম দুই প্রান্তিকে প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার মূলধন ব্যয় করেছে। আমাজন ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, চলতি প্রান্তিকে তারা ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি এবং আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ২ হাজার ৪২০ কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
মাইক্রোসফটের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা অ্যামি হুড বলেছেন, ‘আমরা সামনের বিস্তৃত সুযোগ মাথায় রেখে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব।’
২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রযুক্তি জায়ান্টদের ব্যয় আরও বাড়ছে। মাইক্রোসফট একাই প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার খরচ করার ঘোষণা দিয়েছে। মেটার ব্যয় ৬ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যালফাবেট বলেছে, তারা ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার খরচ করবে, যা পূর্বাভাসকৃত ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি। আমাজন ধারণা করছে, ২০২৫ সালে তাদের মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার কোটি ডলার। তবে আমাজন ওয়েব সার্ভিসে (এডব্লিউএস) বিনিয়োগ ধরা হলে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
সব মিলিয়ে এই চার কোম্পানি ২০২৫ অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বেশি মূলধন ব্যয় করবে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এই ব্যয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রান্তিকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের চেয়েও বেশি।
অবাক করার মতো বিষয় হলো, এত বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা খুশি। মাইক্রোসফট, গুগল ও মেটা প্রত্যেকেই তাদের মূলধন ব্যয় পূর্বাভাস আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। ফলে আয় প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই তিনটি কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য ৪ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছায়।
এআই খাতে সবচেয়ে সংরক্ষিত অবস্থানে থাকা অ্যাপলও এবার ব্যয় বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। চলতি প্রান্তিকে অ্যাপলের মূলধন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৬ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২১৫ কোটি ডলার। যদিও এখনো অ্যাপলকে এআই পণ্য ও সেবা সরবরাহে পিছিয়ে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো এটি সব অ্যাপল ডিভাইস ও প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা।’
তবে নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ জানাতে রাজি হননি কুক।
এদিকে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও পিছিয়ে নেই। ওপেনএআই সম্প্রতি ৮৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মোট ৪ হাজার কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে এবং এর মূল্যায়ন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার কোটি ডলার।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান