ঋণ নিয়ে স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর পর পেলেন তালাক ও এনজিওর মামলা


এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন গৃহবধূ মিতু খাতুন। এখন এনজিওর টাকা ফেরত দিতে না পেরে হয়েছেন মামলার আসামি। অন্যদিকে স্বামী দিয়েছেন তালাক। প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি কোটচাঁদপুর থানায় অভিযোগ করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী মিতু খাতুন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের রাজাপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের মেয়ে। ৭ বছর আগে কোটচাঁদপুরের দুতিয়ারকুঠি গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে নজরুল ইসলামের (৩৮) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
মিতু খাতুন বলেন, ‘৭ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। সে থেকে সংসারজীবন ভালোই কাটছিল আমাদের। সংসারের সুখের জন্য দু-তিনটি এনজিও থেকে লোন করে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম স্বামীকে। বিদেশে গিয়ে সে কাগজপত্র নিয়ে সমস্যা পড়ে। আবার প্রয়োজন হয় টাকার। সে সময় আবারও এনজিও থেকে টাকা তুলে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আট লাখ টাকার লোনি হই আমি। এরপর সে দুই বছর নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করে আসছিল। হঠাৎ করে ভাশুর আজমিরুল ইসলাম (৪২) আর শাশুড়ি মোছা. খায়রুন নেছা (৬২) আমার নামে বিভিন্ন কুৎসা রটাতে থাকেন। প্রতিবাদ করায় ওই দুজন আমাকে নির্যাতন করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আর সবকিছু সাজিয়ে-গুছিয়ে আমার স্বামীকে তাঁরা বলেন। এরপর থেকে সে কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আমার সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে। তালাকনামাও পাঠিয়েছে আমার কাছে। বর্তমানে আমি আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আছি।’
এই গৃহবধূ বলেন, ‘এখন আমার উভয়সংকট। একদিকে এনজিওর কিস্তির টাকা দিতে না পারায় তারা আমার নামে আদালতে মামলা করেছে। অন্যদিকে ওই টাকার জন্য হারাতে বসেছি স্বামীর সংসার। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার মীমাংসার চেষ্টাও করা হয়। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। এ কারণে আবারও থানার শরণাপন্ন হয়েছি।’
এদিকে মিতু খাতুনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে এনজিও থেকে টাকা তুলে বিদেশে গিয়েছিলাম। সে টাকা আমি তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে এনজিওর টাকা পরিশোধ না করে নিজেই আত্মসাৎ করেছে। এ ছাড়া আমি বিদেশে থাকার সময় আমার ভাইকে সাক্ষী করে আরও টাকা তোলে, সেই টাকাও আত্মসাৎ করে মিতু। অন্য লোকের সঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, যা আমার পরিবারের লোকজন আমাকে বলেছে। আর সব মিলিয়ে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘এর আগে একবার সমস্যা হয়েছিল। সে সময় পরামর্শ দিয়েছিলাম। তারা বলেছিল একসঙ্গে থাকবে। পরে কী হয়েছে জানা নেই। তবে মিতু আবারও থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’